আবরার হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি চায় পরিবার
logo
ঢাকা, শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবরার হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি চায় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২৭, ২০২১ ৫:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বহুল আলোচিত আবরার হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে আগামীকাল রোববার (২৮ নভেম্বর) রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করবেন। এ মামলায় সব আসামির ফাঁসি চায় অপেক্ষারত আবরার ফাহাদের পরিবার।

আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, যারা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে, তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক। আমি সব আসামির ফাঁসি চাই। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না হয়। আমার মতো আর কোনো বাবার বুক যেন খালি না হয়। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন, এটাই প্রমাণ হোক। রাষ্ট্র বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে দেশবাসীকে জানিয়ে দিক, অপরাধ করে কেউ বাঁচতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা সব আসামির ফাঁসি চাই। দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা আছে। আদালত আবরার ফাহাদের খুনের সঙ্গে জড়িতদের এমন শাস্তি দিক যাতে আমরা স্বস্তি পাই, এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে।

এক প্রশ্নের জবাবে বরকত উল্লাহ বলেন, আমরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত থাকব। নিজের কানে খুনিদের রায় শুনব। তবে খুনিদের চেহারা সহ্য করতে পারবেন না বলে জানান আবরারের মা রোকেয়া খাতুন।

আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, আমরা আবরারকে তো আর ফিরে পাব না। সব খুনির দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ সাজা হলে কিছুটা শান্তি পাব। আমার ছেলের আত্মাও শান্তি পাবে। ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। আজ আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, কাল হয়তো আরেক মায়ের কোল খালি হবে। আমার মতো আর যেন কোনো মায়ের কষ্ট নিতে না হয়।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মামলায় আরও আসামি হওয়া দরকার ছিল। যারা আশপাশের রুম থেকে ফাহাদের নির্যাতনের খবর জেনেও কেন শিক্ষক বা কর্তৃপক্ষকে জানায়নি? বিষয়টি জানালে ফাহাদের এই নির্মম অত্যাচার ও মৃত্যু হতো না।

আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ফাইয়াজ বলেন, ভাই ছিল আমার সাহস ও ভরসা। ভাইকে হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব। ভাই ছিল কলিজার টুকরা। ভাইয়ের হত্যাকারীদের সবার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির রায় ফাঁসি চাই। পলাতক আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং রায়ের পর তাদের শাস্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।

এর আগে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরদিন ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন। এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে যা বলা হয়
পরস্পর যোগসাজশে শিবির সন্দেহে আবরারকে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন ৩ জন। তাদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

এজাহারে থাকা আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।

এজাহারবহির্ভূত ৬ আসামি হলেন ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ। পলাতক তিন আসামি হলেন মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুই জন এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে গত ১৪ মার্চ আত্মপক্ষ সমর্থনে ২২ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এ মামলায় ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলার চার্জে কিছু ত্রুটি থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনরায় চার্জগঠনের আবেদন করেন। পরদিন আদালত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় চার্জগঠন করে ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে দুই কার্যদিবস রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।

আবরার ফাহাদ ১৩ মে ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে কুষ্টিয়া মিশন স্কুল ও জেলা স্কুলে লেখাপড়া শেষ করে ২০১৮ সালে ৩১ মার্চ তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন। আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

দেশের অন্যতম এই বিদ্যাপিঠে একজন শির্ক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচিত হয়। পরে এ ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের শাস্তির দাবিতে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীসহ দেশের সাধারণ মানুষ।

আরো খবর

 

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।