এনজিও হয়েও অবৈধ ব্যাংকিংয়ে গোপালগঞ্জের শেখ ফরিদের ‘এসটিসি'
logo
ঢাকা, বুধবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এনজিও হয়েও অবৈধ ব্যাংকিংয়ে গোপালগঞ্জের শেখ ফরিদের ‘এসটিসি’

স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক বিবর্তন.কম
অক্টোবর ৯, ২০২০ ১২:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জে কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য সমবায় বিভাগ থেকে নিবন্ধন নিয়েছিলো স্মল ট্রেডার্স কো-অপারেটিভ। নেই ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের কোনো অনুমতি। তারপরও সারাদেশে তফশিলি ব্যাংকের ন্যায় পূর্ণাঙ্গ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, শেখ ফরিদ ওরফে সুমন ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না নিয়েই সারাদেশে প্রায় অর্ধশত শাখা খুলে লুটে নিচ্ছে গ্রাহকের টাকা। ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এসটিসি সে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের নামের সাথে ব্যাংক যুক্ত করে এসটিসি ব্যাংক লিমিটেড নামে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকের মতোই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

সূত্র মতে, এসটিসি কেবল নারায়ণগঞ্জ জেলায় কাজ করার জন্য সমবায় বিভাগ থেকে একটি সমবায় সমিতি হিসাবে নিবন্ধন সংগ্রহ করেছে। ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও অনুমোদন না থাকলেও অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকের মতো সারাদেশে শাখা খোলার মাধ্যমে সমস্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ব্যাংক সংস্থা আইন ও সমবায় আইন অনুসারে, কোনও সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স না নিয়ে কোনও ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আমানত গ্রহণ করতে পারে না। সমবায় সমিতি হিসেবে শুধুমাত্র সমিতির সদস্যদের মধ্যে অর্থের লেনদেন করতে পারে।

কিন্তু অন্যান্য ব্যাংকের মতো এসটিসিও আমানত সংগ্রহ করছে, ঋণ বিতরণ করছে এবং অন্য সব ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলে জানা গেছে। নানাবিধ অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য এরইমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদনও জমা হয়েছে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর জমা দেয়া সে চিঠিতে বলা হয়েছে, এসটিসির মালিক শেখ ফরিদ ওরফে সুমন প্রতারণায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকেও হার মানিয়েছেন।
সুমনের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার খান্দারপাড়ে। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা সুমন দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে একাধিক সিন্ডিকেট চক্র তৈরি করে অসংখ্য মাল্টিপারাপাস কো-অপারেটিভের নামে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্বল্পশিক্ষিত সুমন নিজেকে মাস্টার্স বা ডক্টরেট করা বলেও দাবি করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

অবৈধ টাকার জোরে তিনি বিনিয়োগ করেছেন বেশ কিছু সিনেমা ও নাটকেও। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাউথ বাংলা ক্লাব নামে একটি ক্লাব করে বিভিন্ন খেলা দেওয়ার নামে অনেক ভিআইপিদের অতিথি বানিয়ে তাদের সাথে ফটো সেশন করে এবং ক্লাবের অন্তরালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যেমে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে আদম পাচারসহ ক্লাবের আড়ালে ক্যাসিনোসহ মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।

তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে এসটিসি নামে ভুয়া ব্যাংক বানিয়ে সেখানে পরিচালক নিয়োগসহ ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও প্রতিনিধি নিয়োগের অভিনব পদ্ধতিতে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং কৌশলে শেখ ফরিদ এমডি হয়ে এই অপকর্ম গুলো করছে দুদকে দেয়া আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সমবায় আইনের সংশোধিত উপ-ধারা অনুযায়ী, তার অপারেটিং ক্ষেত্রের বাইরে সমবায় সমিতি হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা সমবায় সমিতি বিধান ২০০৪ এর ১২(২) এর পরিপন্থী। অধিকন্তু, ২০০২ সালে সংশোধিত সমবায় সমিতি আইন ২০০৩ এবং ২০১৩ এর ২৩ (১) ধারা অনুসারে কোনও সমবায় সমিতি তার শাখা অফিস খুলতে পারে না।

২৬নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সমবায় সমিতি কোনও আমানত বা বিতরণ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না সদস্যদের ব্যতীত অন্য কাউকে যে কোনও ঋণ দিতে পারবে না। তবে, নিয়মের বিরোধিতা করে এসটিসি কো-অপারেটিভ সোসাইটি শব্দের পরে ‘ব্যাংক’ শব্দ যুক্ত করে পুরো ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মামুনুল হক জানান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় (এসটিসি) ব্যাংক লিমিটেড নামের কোন ব্যাংককে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।