বাসায় কেউ না থাকায় বান্ধবীকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে তানভীর ইফতেফার দিহান। সেই পরিকল্পনাতেই আনুশকা নুর আমিন নামে ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীকে গ্রুপ স্টাডির নামে বাসায় ডেকে নিয়ে যায় দিহান। সেখানে আনুশকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এসময় আনুশকা বার বার বলছিল ‘কি করেছো দিহান, আমি আর বাঁচবো না’
একথা বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যায় আনুশকা। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশের কাছে এমনটাই জানিয়েছে দিহান। তবে চিকিৎসকদের দাবি হাসপাতালে নেয়ার আগেই আনুশকার মৃত্যু হয়েছে। স্কুলছাত্রী আনুশকাহকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় গ্রেফতার তানভীর ইফতেখার দিহান আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ম্যাজিস্ট্রেট দিহানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে কলাবাগান থানায় আনুশকাহর বাবার করা মামলায় শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে দিহানকে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নেয় পুলিশ।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান আসামিকে আদালতে হাজির করেন। আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ু পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
ডা. সোহেল মাহমুদ আরোও জানান, ‘এছাড়াও ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।’
পুলিশ জানায়, এর আগে বয়স নির্ধারনের জন্য ওই ছাত্রীর মরদেহের এক্স-রেসহ প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়। পরে স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে যান। ওই স্কুলছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তার ‘বন্ধু’ তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা আলামিন।
এদিকে ধর্ষণের পর হত্যার দায় স্বীকার করার পর শুক্রবার ৮ জানুয়ারি দিহানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, গত রাতে তানভীর ইফতেফার দিহানকে (১৮) আসামি করে ছাত্রীর বাবা ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন এক তরুণ।
কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। খবর পেয়ে নিউমার্কেট অঞ্চল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। এরপর কলাবাগান থানার পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে আটক করে।
খবর পেয়ে ওই তরুণের তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরকেও আটক করে। পরে চারজনকে কলাবাগান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ পরে ওই ছাত্রীর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এসি আবুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, পরিবারের সবাই বাইরে থাকার সুযোগে পূর্বপরিচিত ওই স্কুলছাত্রীকে তাদের ডলফিন গলির ফ্ল্যাটে নিয়ে যান দিহান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপরই মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তিনি তাকে আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেয়ার আগেই ওই ছাত্রীর মৃত্যু হয়।