ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৩ সহজীকরণ ও দালাল ছাড়া পাসপোর্ট আবেদন করার সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের ১১৯ তম দেশ হিসেবে ই পাসপোর্ট চালু করেছে। এখন যেকউ ঘরে বসে নিজেই নিজের ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এজন্য ই পাসপোর্ট করার নিয়ম জানতে হবে।
ঘরে বসে পাসপোর্ট পেতে ই পাসপোর্ট আবেদন করতে কি কি লাগে, ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম ও খরচ ২০২২, ই পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায় প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানা জরুরী।
কেননা, একটি ই পাসপোর্ট আবেদন সাবমিট করার পর যদি দেখেন কোথাও ভুল হয়েছে, তাহলেও আপনি তা ডিলিট করে নতুন করে সংশোধন করার সুযোগ পাবেন না। সেইসাথে, একটি ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে একবারই ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করা যায়।
যদি আপনার ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়মে ভুল হয়, তবে পুণরায় আবেদন করার জন্য প্রথমে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আবেদন বাতিল করিয়ে নিতে হবে, এরপর আবার আবেদন করতে পারবেন।
তাই, ই পাসপোর্ট করার নিয়ম জানার পাশাপাশি পাসপোর্ট আবেদন বাতিল এবং সংশোধন করার নিয়মও জানা থাকা দরকার।
আপনি যদি ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২২ সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে তারপর আবেদন করেন, তাহলে আশা করি এমন কোন সমস্যা হবেনা যে আপনাকে বাতিল করে পুণরায় আবেদন করার ঝামেলা পোহাতে হবে।
১। একাউন্ট তৈরি:
ই পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য প্রথমেই epassport.gov.bd সাইটে প্রবেশ করে Apply Online বাটনে চাপ দিন। এখানে আপনার জেলা এবং নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন সিলেক্ট করে continue করুন।
পরবর্তী পেজে নিচের মতো একটি পেজ আসবে যেখানে ইমেইল এড্রেস, পাসওয়ার্ড, ভোটার আইডির সাথে মিল রেখে নাম, Given Name, Surname দিয়ে ই-পাসপোর্ট একাউন্ট তৈরি করতে হবে। এখানে Given Name অপশনাল থাকলেও অবশ্যই লিখে দিতে হবে।২। মেইল ভেরিফিকেশন:
ই পাসপোর্ট একাউন্ট একটিভ করার জন্য একটি মেইল পাঠানো হবে, মেইলে পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করলে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে।
৩। লগইন করুন:
একাউন্ট তৈরি হওয়ার পর আপনার ইমেইল এড্রেস এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্টে লগইন করে নিন।
১. 5 Step to e-Passport: একাউন্টে লগইন করার পর 5 Step to e-Passport এ ক্লিক করলে ইনফরমেশন পেজে নিয়ে যাবে।
২. তথ্য দিন: প্রথম পেজে নির্দিষ্ট তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন। যেসব তথ্য বাধ্যতামূলক নয়, সেগুলো না দিলেও চলবে।
তবে! Given Name অপশনাল হলেও অবশ্যই পূরণ করতে হবে, নইলে security checking এ ফেরৎ পাঠাবে।
৩. নাম সঠিকভাবে লিখুন: আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নামের সাথে যদি MD এর পর ডট থাকে তবুও এখানে দেওয়ার দরকার নেই। কেননা, অনেক দেশের ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে, এমনকি পাসপোর্ট অফিসেও ঝামেলা করতে পারে, যদিও করার কথা না।
আমাদের কাছে MD. মানে মোহাম্মদ হলেও বিদেশে Managing Director হিসেবে পরিচিত। তো, যারা ওয়ার্কার্স ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করবেন, তাদের নামের সাথে MD. থাকলে ভিসা নাও দিতে পারে। আর যেহেতু পাসপোর্ট এবং ভিসায় একই নাম থাকতে হয়, তাই এখানেই ডট দিবেন না। এতে আপনার কোনো সমস্যা হবে না, বরং অনেক্ষেত্রেই সুবিধা পাবেন। তবে যারা স্টুডেন্ট, বা কাজের জন্য ভিসা অ্যাপ্লাই করার চিন্তা নেই, তাদের জন্য ডট ব্যবহার করলেও ঝামেলা হবে না। তবে না দেওয়াই উত্তম।
৪. পিতা মাতার ভোটার আইডি: পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক নয়। যদি আপনার পিতার ভোটার আইডি কার্ডে থাকা নাম, আপনার আইডি কার্ডের পিতার নামের সাথে হুবহু মিল থাকে, তবে নাম্বারটি এড করবেন, নইলে দরকার নেই। মায়ের ক্ষেত্রেও একই কথা।
৫. চেক করুন: বাকি সকল ইনফরমেশন দিয়ে ফরম পূরণ করার পর পেমেন্ট অপশন পাবেন। পেমেন্ট এর দিকে যাওয়ার আগে পূরণকৃত তথ্যের সারাংশ পাবেন, সেটি আবারো চেক করুন, দেখুন কোনোকিছু ভুল হয়েছে কি না। যদি হয়, তবে এডিট বাটনে ক্লিক করে ঠিক করে নিন।
৬. পেমেন্ট: এবার proceed to payment e ক্লিক করে পেমেন্ট পদ্ধতি বাছাই করুন।
৭. ই পাসপোর্ট ফি জমাদান: অফলাইন এবং অনলাইন দুইভাবেই ই পাসপোর্ট আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে। অনলাইনে বিকাশ, রকেট, নগদ, ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করতে পারবেন। অন্যদিকে, ই পাসপোর্টের আবেদন ফি জমা নেয় এমন ব্যাংক গুলো হলো- সোনালী, জনতা, রূপালী ব্যাংক।
ব্যাংক পেমেন্ট সিলেক্ট করলে ই পাসপোর্ট আবেদন সাবমিট করার অপশনটি একটিভ হয়ে যাবে। ক্লিক করে সাবমিট করুন। তবে সাবমিট করার আগে ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম pdf টির সাথে আপনার আবেদন ফরম মিলিয়ে দেখে নিন, কোনো অপশন বাদ পরেছে কি না।
৮. অ্যাপ্লিকেশন সামারি ডাউনলোড করুন: ডাউনলোড করার পর অ্যাপ্লিকেশন সাবমিটেড লেখা আসা পেজটিও সেভ করুন। এজন্য Ctrl+P তে ক্লিক করলে সেভ অপশন পাবেন।
৯. প্রিন্ট করুন: পেজগুলো দুই কপি করে প্রিন্ট করে নিন। প্রিন্ট করার সময় অ্যাপ্লিকেশন সামারি পেজের দুইপাশেই প্রিন্ট করবেন।
১০। ব্যাংকে টাকা জমাদান: প্রিন্টেড ১ কপি এটাচ করে ব্যাংকের ইমিগ্রেশন শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করুন। সেখানে তারা আপনাকে ব্যাংক স্লিপ বানিয়ে দিবে। পরবর্তীতে টাকা জমা দিয়ে প্রাপ্ত রশিদ অন্য প্রিন্টেড কপির সাথে সংযুক্ত করুন।
এইসব কাগজপত্র একসাথে স্ট্যাপল করে নিবেন।
আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা যদি আলাদা হয়, তবে সেক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা থেকে নাগরিক সনদপত্রের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।
যদি আপনি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হন, তবে সাথে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপিও সংযুক্ত করতে হবে।
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য যাওয়ার সময় অবশ্যই অরিজিনাল ন্যাশনাল আইডি কার্ড এবং স্টুডেন্ট আইডি কার্ড (যদি থাকে) সাথে নিবেন।
ই পাসপোর্ট কত দিনে হাতে পাবেন তা নির্ভর করছে আপনি কোন ধরণের ডেলিভারী সার্ভিস নিচ্ছেন তার উপর। ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম অনুসরণ করে স্টেপ ফলো করতে থাকলে দেখবেন ই-পাসপোর্ট-এর তিন ধরনের ডেলিভারি আছে যেখানে, আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর থেকে নির্ধারিত কর্মদিবস পর ই-পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে।
ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম একই হলেও মেয়াদ, পৃষ্ঠা এবং আবেদনের ধরনের উপর ভিত্তি করে পাসপোর্ট করার খরচ আলাদা।
ডেলিভারি |
৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পাতা ই পাসপোর্ট ফি |
৫ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতা ই পাসপোর্ট ফি |
রেগুলার |
4,025 টাকা |
6,325 টাকা |
এক্সপ্রেস/জরুরী |
6,325 টাকা |
8,625 টাকা |
সুপার এক্সপ্রেস |
8,625 টাকা |
12,075 টাকা |
ডেলিভারি |
১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পাতা ই পাসপোর্ট ফি |
১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতা ই পাসপোর্ট ফি |
রেগুলার |
5,750 টাকা |
8,050 টাকা |
এক্সপ্রেস/জরুরী |
8,050 টাকা |
10,350 টাকা |
সুপার এক্সপ্রেস |
10,350 টাকা |
13,800 টাকা |
ই পাসপোর্ট আবেদন করতে গিয়ে কোনো ভুল করলে এবং সেই অবস্থায় সাবমিট করে ফেললে আপনি নিজে নিজে আর ঠিক করতে পারবেন না।
ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রথমে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহকারী উপ-পরিচালক এর কাছে ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার জন্য একটি দরখাস্ত জমা দিন। দরখাস্তে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি নং……….. উল্লেখ করবেন।
উপ-পরিচালক তাৎক্ষণিক আপনার পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করে দিবেন। পরবর্তীতে ৭ দিন পর নতুন মেইল এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে আরেকটি একাউন্ট করে পুনরায় ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম অনুসরণ করে ফরম পূরণ করে জমা দিন।
ই পাসপোর্ট আবেদন সম্পন্ন করার পর আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানতে ঘরে বসেই চেক করতে পারেন। ই পাসপোর্ট চেক করার জন্য স্ট্যাটাস চেক করার পেজটি ভিজিট করুন এবং আপনার Application ID ও জন্ম তারিখ পূরণ করে সাবমিট করুন।
সঠিকভাবে ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম জেনে এপ্লাই করলে খুব সহজে কাজগুলো হয়ে যাবে। নতুবা বেশ ঝামেলায় পড়ে যাবেন। তাই, ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া আবশ্যক।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২২ নিয়ে এখানে আমরা যে আলোচনা তুলে ধরেছি, তা কয়েকেবার পরীক্ষিত। তাই, উপরিউক্ত পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি কোন ঝামেলা ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পাবেন, ইন শা আল্লাহ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441