একটা সময় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ হয়তো হবেন আফিফ হোসেন। সেই পথে তার এগিয়ে যাওয়ার সূচনা হতে পারে এশিয়া কাপ দিয়ে। একইভাবে এই টুর্নামেন্ট ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েক জনের জন্য। ওপেনিংয়ে নিজের জায়গা পাকা করার সুযোগ এনামুল হকের সামনে। মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির রহমানের জন্য চ্যালেঞ্জ নিজেদের মেলে ধরার। আর মেহেদী হাসান মিরাজের দেখানোর পালা, ২০ ওভারের সংস্করণের জন্য নিজেকে কতটা গড়ে নিতে পেরেছেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে শনিবার শুরু হতে যাওয়া ছয় দেশের এই টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ সদস্যের জন্য হাজির নানারকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে। কারো জন্য লড়াইয়ে টিকে থাকার, কারো নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার। বেশিরভাগ যদি এই পরীক্ষায় উতরে যান, তাহলে পাল্টে যেতে পারে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চেহারা।
আফিফ হোসেন
সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হতাশাময় পথচলায় যা একটু প্রাপ্তি, এর শীর্ষে হয়তো থাকবে আফিফের ব্যাটিং। তাই তাকে নিয়ে আশায় টিম ম্যানেজমেন্ট।
টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ধুঁকছে প্রবলভাবে। এমন ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানকে তাই যত বেশি সম্ভব ওভার খেলতে দিতে চাওয়ার কথা সব দলেরই। তবে বাংলাদেশ দলে কাজটা সহজ নয়। মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমানরা আছেন দলে। তারা নামতে পারেন আফিফের আগে।
তবে কিছু দিন আগে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বলেছিলেন, মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞরা ফিরলেও এশিয়া কাপে ঠিক থাকবে আফিফের পজিশন। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক দেখেন দেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ হিসেবে।
গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দ্বিতীয় ম্যাচে পাঁচে সুযোগ পান আফিফ। ২৭ বলে করেন ৩৪। পরের ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডার ওপরে তুলে আনা হয় আরও এক ধাপ। দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে চারে নেমে করেন ৩৮ বলে ৫০।
সবশেষ জিম্বাবুয়ে সফরে পাঁচে নেমে প্রথম ম্যাচে ১০ রানে আউট হলেও পরের ম্যাচে চারে নেমে করেন অপরাজিত ৩০, শেষটিতে আবার ছয়ে নেমে ২৭ বলে অপরাজিত ৩৯। ছন্দ ধরে রেখে ভালো করেন ওয়ানডে সিরিজেও।
সব মিলিয়ে দেশের হয়ে ৪৭ টি-টোয়েন্টিতে ১৯.৩৮ গড়ে তার ৬৯৮ রান। স্ট্রাইক রেট ১১৮.১০। দুই ফিফটি, সর্বোচ্চ ৫২। সঙ্গে আছে ৮ উইকেট।
আফিফের সামর্থ্যের ততটা ছাপ নেই এই পরিসংখ্যানে। ছয়-সাতে নেমে খুব একটা সুযোগও পান না। তবে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে আনা হলে হয়তো দ্যুতিময় হতে পারে তার পরিসংখ্যান।
এনামুল হক
দলে লিটন দাসকে নিয়ে বাংলাদেশ খুঁজছিল আরেকজন ওপেনার। চোটের জন্য এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান ছিটকে যাওয়ায় এখন খুঁজতে হচ্ছে দুই জন। তার একজন হতে পারেন এনামুল হক।
ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ ধারাবাহিক এনামুল। বিপিএলে বেশিরভাগ সময়ই ভালো করেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্যের ছাপ রাখতে পারেন কমই। তাই ১০ বছরের ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে পেরেছেন কেবল ১৯টি।
গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন ম্যাচ মিলিয়ে করেন কেবল ২৯ রান। পরে জিম্বাবুয়েতে খেলেন ১৬ ও ১৪ রানের দুটি ইনিংস। সব ম্যাচেই ডট বল খেলেছিলেন প্রচুর, কখনও থিতু মনে হয়নি তাকে। তবুও দলে টিকে আছেন আর কেউ নেই বলে।
এবারের এশিয়া কাপ হতে পারে তার নিজের সামর্থ্য দেখানোর মঞ্চ। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে রান আছে তিন হাজারের উপরে। এক সেঞ্চুরির পাশে আছে ১১ ফিফটি। স্ট্রাইক রেট ১২০-এর একটু নিচে। এই পারফরম্যান্স আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বয়ে নিতে পারলে নিশ্চিতভাবেই ওপেনিং নিয়ে বাংলাদেশের দুর্ভাবনা কমবে কিছুটা।
মাহমুদউল্লাহ
দলের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের স্রোতে ভেসে গেছেন অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। কাণ্ডারি হিসেবে দেখাতে পারেননি পথ। বরং নিজের পারফরম্যান্সও পড়তির দিকে। নেতৃত্ব হারানোর পর এখন দলে জায়গা হারানোর শঙ্কা তার সামনে।
তবে দীর্ঘ দিনের সতীর্থের কাঁধে আস্থার হাত রেখেছেন সাকিব আল হাসান। এটুকু যথেষ্ট নয়। আস্থার প্রতিদান মাঠে দিতেই হবে মাহমুদউল্লাহকে। মেটাতে হবে সময়ের দাবি, দলের প্রত্যাশা।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্ব থেকে এখনও পর্যন্ত ১৪ ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহর রান ১৭.৪১ গড়ে ২০৯। যে পজিশনে তিনি ব্যাট করেন, সেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবশ্য স্ট্রাইক রেট। তিনি বিবর্ণ সেখানেও, স্ট্রাইক রেট কেবল ১০০.৪৮!
এই পরিসংখ্যান একেবারেই বেমানান তার পাশে। উত্তাপটা হয়তো টের পাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ নিজেও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ দিন খেলার অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন, তার জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত।
সাব্বির রহমান
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন হতে পারতেন তিনি। সেই সামর্থ্য তার আছে। মাঝে মধ্যে ঝলক দেখিয়ে কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছিলেন!
পথ তিনি নিজে খুঁজে পাননি। আর কোনো বিকল্প না থাকায় নানা পথ ঘুরে তাকেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আশা, বড় মঞ্চে হয়তো দেখা যাবে পুরনো সাব্বিরকে।
ক্যারিয়ারের শুরুটা কী দুর্দান্তই না ছিল সাব্বিরের জন্য। কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি ধারাবাহিকতা। তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন হয়তো ২০১৬ এশিয়া কাপ। সেই আসরে ১৭৬ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন সাব্বির। জিতেছিলেন সিরিজ সেরার পুরস্কার!
প্রায় তিন বছর ধরে দেশের হয়ে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি সাব্বিরের। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ফেরার দাবি জানানোর মতো তেমন কিছু করতে পারেননি তিনি।
বিপিএলের সবশেষ আসরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান! খেলতে পেরেছিলেন কেবল ৬টি ম্যাচ। যে সংস্করণকে মনে করা হয় তার শক্তির জায়গা, সেখানে ওই ৬ ইনিংসে রান মোটে ১০৯।
খুব খারাপ করেননি ঢাকা লিগে। ৫১৫ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরারদের তালিকায় তিনি ছিলেন আটে। তবে ১৪ ইনিংসে স্রেফ একটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ফুটে ওঠে, তার ধারাবাহিকতা খুব একটা ছিল না।
তারপরও হয়তো সুযোগ পেতে পারেন সাব্বির। পারফরম্যান্সই বলে দেবে শেষবারের মতো কী না।
মেহেদী হাসান মিরাজ
টেস্ট ও ওয়ানডে দলের নিয়মিত সদস্য মিরাজ অনিয়মিত টি-টোয়েন্টি দলে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, এই সংস্করণে দেশের হয়ে সবশেষ খেলেছেন প্রায় চার বছর আগে।
বোলিংয়ে নেই খুব একটা বৈচিত্র্য, করেন প্রথাগত অফ স্পিন। তার জন্য টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ভীষণ কঠিন। ১৩ ইনিংসে বল করে উইকেট মোটে চারটি। ওভার প্রতি গুনেছেন ৯.১৬ রান। গড় ৮২.৫০!
বিপিএলে কিছু ম্যাচে অবশ্য দেখাতে পেরেছেন ঝলক। তবে চিত্রটা বড় করে দেখলে স্রেফ স্পিনার হিসেবে খেলা তার জন্য সহজ নয়।
মিরাজের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে দলে ওপেনার ঘাটতি। বিপিএলে ওপেনার হিসেবে সাফল্য আছে তার ঝুলিতে। এশিয়া কাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে খেলা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই ওপেন করেন মিরাজ। বিকল্প ওপেনার হিসেবে হয়তো তার নাম আছে টিম ম্যানেজমেন্টর ভাবনায়।
সব মিলিয়ে মিরাজের সামনের পথটা সহজ নয়। তবে চার বছরে কতটা উন্নতি করতে পেরেছেন, সেটার ছাপ রাখার বড় একটা সুযোগ এই এশিয়া কাপ। জায়গা পাকা করতে দেখাতে হবে, তিনি এখন টি-টোয়েন্টিতেও উপযোগী।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441