মা হতে চলেছেন, এজন্য আপনাকে অভিনন্দন! অনাগত সন্তান নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে মনে অনেক প্রশ্নও আসছে। তার মধ্যে একটি বিষয় সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা হলো: আমার কী খাওয়া উচিত?
জীবনের সব পর্যায়েই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটা বিশেষভাবে জরুরি। সুষম খাবার আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠা, তার বিকশিত হওয়া এবং সঠিক ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
পরিবারের নতুন সদস্যের কল্যাণের জন্য কীভাবে আপনার খাবার তালিকায় পরিবর্তন আনবেন, তা জানতে আমাদের টিপসগুলো দেখুন।
একটি পুষ্টিকর খাবার তালিকা তখনই নিশ্চিত হয় যখন মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সবগুলো খাদ্য উপাদানযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় থাকে।
আপনার গর্ভধারণের শুরু থেকেই যেসব ভিটামিন ও খনিজ খাদ্য উপাদান প্রয়োজন সেগুলো তুলে ধরা হল :
শুধু খাবার থেকে দৈনিক ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড পাওয়াটা কঠিন হওয়ায় আপনি প্রতিদিন সম্পূরক হিসেবে অন্তত ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড সেবন করতে পারেন। তাতে আপনার প্রয়োজনটা পূরণ হবে। আপনি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকেই বা গর্ভধারণ নিশ্চিত হলেই এটা নেওয়া শুরু করতে পারেন। আপনার জন্য কোন সম্পূরকটি উপযুক্ত, সেটা বোঝার জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
গর্ভবতী মায়েদের নির্দিষ্ট কিছু খাবার থেকে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর তা গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি করতে পারে। গর্ভধারণকালে আপনাকে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে:
কাঁচা, পাস্তুরায়ন ছাড়া দুধ এবং ওই ধরনের দুধ থেকে তৈরি কোমল পনির। এগুলোতে লিসটেরিয়া নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা লিসটেরিওসিস নামের এক ধরনের রোগ তৈরি করতে পারে।
মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার। কারণ সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
কাঁচা ও পুরোপুরি রান্না না হওয়া মাংসজাত পণ্য যেমন সসেজ ও কোল্ড কাট। এগুলোতে টোকসোপ্ল্যাজমা গনডির মতো পরজীবী এবং সালমোনিলা ও লিসটেরিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
কাঁচা মাছ ও সিফুড। কারণ এগুলোতে উচ্চমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী থাকতে পারে।
কিছু মাছে উচ্চ মাত্রায় পারদ (মার্কারি) থাকে এবং এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। বেশির ভাগ শিকারি মাছ যেমন হাঙ্গর, সোর্ড ফিশ, মার্লিন ও কিং ম্যাককেরেলে মার্কারি বেশি থাকে।
স্মোকড কিন্তু রান্না না করা মাছ যেমন, স্মোকড স্যালমন।
রান্না না করা অঙ্কুরিত বীজ, খাদ্যশস্য ও শিম। কাঁচা মূলা, শিম ও আলফালফার বীজ এবং রেডি-টু-ইট সালাদ এসব খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলোতে লিসটেরিয়া, সালমোনিলা ও ই. কোলির মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিম। এতে সালমোনিলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
যকৃত (লিভার) ও অন্যান্য অঙ্গের মাংস। যকৃতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকলেও এটা গর্ভধারিণী নারীদের খেতে বলা হয় না। কারণ এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ থাকে এবং এই মাংসে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে।
খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
ব্যবহারের পর সব পাত্র ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
মাংস পুরোপুরি রান্না করতে হবে।
রান্না না করা শাকসবজি, সালাদের সবজি ও ফলমূল খুব সতর্কতার সঙ্গে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
যথাযথ তাপমাত্রায় খাবার সংরক্ষণ করতে হবে।
রান্নার পরপরই খাবার খেয়ে নিতে হবে।
প্রথম তিন মাসে আপনার কোনো বাড়তি খাবারের দরকার নেই। দ্বিতীয় তিন মাসে প্রতিদিন আপনার ৩৪০ ক্যালোরি বাড়তি দরকার হবে। আর শেষ তিন মাসে আপনার প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪৫০ ক্যালোরি দরকার হবে। এই বাড়তি শক্তির জন্য হাতের কাছে স্বাস্থ্যকর হালকা খাবার যেমন বাদাম, দই ও তরতাজা ফলমূল রাখবেন। এ বিষয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনা পেতে আপনার স্বাস্থ্য সেবাদাতার সঙ্গে কথা বলুন।
আপনি যদি ভেজিটেরিয়ান বা ভিগান ডায়েট অনুসরণ করেন তাহলে আপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘বি১২’ ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করছেন। এ বিষয়ে সমাধান পেতে আপনার চিকিৎসক বা রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলুন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441