নির্বাচন এসেছে, কেন ভয় পাব উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই।
সোমবার (১৫ মে) বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সদ্য সমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা পশ্চিমা গণতন্ত্র ফলো করি। ব্রিটেনে কীভাবে নির্বাচন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেইভাবে করব। আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, সংসদে যেসব সংসদ সদস্য আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে নির্বাচনকালীন তারা সরকারে আসতে, আমরা নিতে রাজি আছি। এমনকি ২০১৪ সালেও খালেদা জিয়াকেও আমি এ আহ্বান করেছিলাম, তিনি আসেননি।
বিএনপি মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন আমাদের নামতে দিয়েছে? হামলা করেছে, ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার লোক ও ৩৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে। ২৭টি রেল পুড়িয়েছে। ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। আন্দোলন করুক তারা কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি জ্বালাও-পোড়াও কিছু করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার পোড়ায় তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না। একেকটা পরিবার আজকে কি দুরবস্থায় আছে খোঁজ রাখেন? নিজের সন্তানকে কোলে নিতে পারে না। চেহারা নিয়ে কোথাও যেতে পারে না। কি বীভৎস অবস্থা সৃষ্টি করেছে বিএনপি-জামায়াত। ২০০৮ সালে তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট পেয়েছে ২৯টি আসন। তারা আবার বড়-বড় কথা বলে। কার টাকায় আন্দোলন করছে, কোথায় থেকে টাকা পাচ্ছে তারা। বাংলাদেশর মানুষ কি অন্ধ হয়ে গেছে? হাজার-হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে।
মোখার আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। আমি নিজে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি, বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুর্নবাসন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক কৌশলগত অংশিদারিত্বে উন্নীত হয়েছে
বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশিদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন, বিগ-বি প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারকরণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জাপান ওভারসিজ কোঅপারেশন ভলান্টিয়ার প্রকল্প পুনরায় চালু করা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগ, মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, ঢাকা-টোকিও সরাসরি বিমান চলাচল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই
দেশের রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা রিজার্ভ নিয়ে বলতে বলতে সবার মাথায় এটা ঢুকে গেছে। রিজার্ভ নিয়ে দেশে তেমন কোনো সংকট নেই। রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলার যেন আমাদের হাতে থাকে, সেটা নিয়েই আমাদের চিন্তা। তবে আমরা সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করি। আগে কত রিজার্ভ ছিল, এখন আমাদের রিজার্ভ কত এসব। তাই এটা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। আমাদের জমি আছে আমরা নিজেদের খাবার নিজেরাই উৎপাদন করব। এটা নিয়েও আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
মহার্ঘ্য ভাতা নয়, বেতন বৃদ্ধি নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৫ সালে আমরা যখন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করি, আমরা একটা গবেষণায় দেখেছিলাম যে ইনফ্লেশনের (মুদ্রাস্ফীতি) সাথে সাথে একটা পারসেন্ট হারে বেতন বাড়বে। প্রতি বছরের হিসাব মতে ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াই। অনেক সুযোগও দিয়েছি, বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে, ফ্ল্যাট কেনার ভাতা, গাড়ি কেনার লোন ইত্যাদি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ইনফ্লেশন কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। কমিশন কর, এটা কর, সেটা কর, এতে খুব বেশি লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, আর কিছু লোক লাভবান হয়। এ জন্য প্রতি বছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব। তাছাড়া অনেক সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট কেনার লোন, গাড়ি কেনার লোনসহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু সবার জন্যই। তাই আমাদের মহার্ঘ্য ভাতার দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, তাই ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন যেন বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হবে বলে জানিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমাদের আগামী নির্বাচনের ইশতেহার হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। যদিও এটা আগেই বলে দিয়েছি। কিন্তু এটাই হবে, বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ব।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441