বরগুনার তালতলী উপজেলার দক্ষিণ ঝাড়াখালী সালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মানসুরুল আলম অসুস্থতা জনিত কারণসহ নানা অজুহাতে ১০ মাস মাদ্রাসায় যাননি। তবে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলান আঃ জব্বার এর যোগসাজশে নিয়মিত সরকারি বেতন ভাতা তুলছেন তিনি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ঝারাখালী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মানসুরুল আলম চলতি বছরের (২০২২) জানুয়ারী মাস থেকে মাদ্রাসায় ক্লাস করেননি। ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আঃ জব্বার শিক্ষক হাজিরা খাতা গোপনে বাড়িতে পাঠিয়ে স্বাক্ষর করেছেন তার। এভাবে তিনি বাড়িতে বসে মাসিক বেতন ভাতার সরকারি অংশ তোলার স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলন করেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের মাসিক বেতন ২০ হাজার টাকা সে হিসেবে তিনি এক বছরে মাদ্রাসায় না গিয়েও প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন।
বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা জানতে পারেন ও মাদ্রাসায় গিয়ে দেখে সেপ্টেম্বর ২২ ইং মাসের বিগত দিনের সম্পূর্ণ হাজিরা খাতা খালি রয়েছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি করে একটি মোটর সাইকেলযোগে মাদ্রাসায় উপস্থিত হন। তার মাদ্রাসায় পৌছানোর আগেই সাংবাদিকরা হাজিরা খাতার ছবি তুলে নেন। ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আঃ জব্বার ও শিক্ষক মানসুরুল আলমের এসব কর্মকাণ্ডে খুব্ধ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ জুন ভোট গ্রহন হয়। সেই ইউপি নির্বাচনে তিনি কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদন্ধীতা করেন। নিবার্চন চলাকালীন সময়ে মাদ্রাসা থেকে ছুটি নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি কোনো ধরনের ছুটি না নিয়েই নিবার্চন পরিচালনা করেন। মে ও জুন মাসে প্রায় ১ মাস নির্বাচনী প্রচারের কাজে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকেন। পরবর্তীতে নিবার্চন চলাকালীন মাসেও তিনি ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আঃ জব্বারের সহযোগিতায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতনভাতা তুলেন। এর পরে জুলাই মাসে মাদ্রাসায় না গিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করে বেতনভাতা তুলেন।মেডিকেল সার্টিফিকেট এর মেয়াদ শেষ হলে নিয়মানুযয়ী পরবর্তী তিন মাস মূল বেতনের অর্ধেক পাবেন। সেই অনুযায়ী আগস্ট মাসে তিনি অর্ধেক বিল নেন। সেপ্টম্বর পুরো মাসে তিনি মাদ্রাসায় অনুপুস্থিত থাকেন ও হাজির খাতায় স্বাক্ষর নেই। তবে ঐ মাসের শেষে বিল করানোর জন্য পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা বেসরকারী ক্লিনিক থেকে হাতে লিখে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট এনে বিল করিয়ে বেতন নেন। চলতি মাসেও তিনি অনুপুস্থিত রয়েছে।
নাম না প্রকাশে একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক বলেন, মানসুরুল আলম চলতি বছরের কোনো মাসে মাদ্রাসায় আসেননি। তিনি ভারপ্রাপ্ত সুপারের সাথে গোপন সখ্যতা তৈরি করে বাড়িতে হাজিরা খাতা পাঠিয়ে স্বাক্ষর আনা হয়।
এবিষয়ে মানসুরুল আলম শিক্ষক বলেন, তোমরা (সাংবাদিক) আর যাই করো আমার ক্ষতি করিয়ো না। আমি অনেক অসুস্থ। এই বলে মুঠো ফোনটি কেটে দেয় ঐ শিক্ষক।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আব্দুর জব্বারএর কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, মেডিকেল ফিটনেস এর ভিত্তিতে তার বেতন ভাতা দিয়েছি। তার তো হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মোঃ কামরুজ্জামান জানান, মেডিকেল ফিটনেস দিতে হলে সিভিল সার্জনকে মেডিকেল ফিটনেস দিতে হবে। কিন্তু তিনি কলাপাড়া হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসারের প্যাডে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেখান এ সময়ে ওই মেডিকেল অফিসার ছিলেন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডিউটিরত।
এ বিষয় তালতলী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এস এম সাদিক তানভীর বলেন,যদি কোন শিক্ষক অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কওে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441