বরগুনার তালতলীতে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে লাইসেন্স ছাড়াই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবৈধ বাণিজ্য। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে একটি ক্লিনিকের অনুমোদন (লাইসেন্স) থাকলেও তাও মেয়াদ উত্তীর্ণ। বাকি গুলোর একটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন নেই।
বরগুনার সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, তালতলী উপজেলায় নিউ পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, তালতলী ইসলামী হসপিটাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার,তালতলী ডিজিটাল ডায়াগনোস্টিক সেন্টার,দোয়েল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে। তার একটি নিউ-পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে তবে চলতি বছরের জুন মাসে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। বাকি তিনটিতে কোনো ধরেন লাইসেন্স নেই। তবে আবেদন করেন তারা।
সরকারি অনুমোদন পাওয়ার আগেই ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে ।অনলাইনে আবেদন করা হলেও এখনো তারা লাইসেন্স পাননি । সরকারি বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স পাওয়ার একদিন আগেই স্বাস্থ্যসবা দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। কিন্তু বছরের পর বছর বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান খুলে শুরু করেন অবৈধ বাণিজ্য। এদিকে নবায়ন না করেও নিউ পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চলছে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে।
[caption id="attachment_3487" align="aligncenter" width="600"] দোয়েল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার[/caption]
উপজেলা পরিষদের সামনে মুক্তিযোদ্ধা ভবন ভাড়া নিয়ে তালতলী ইসলামী হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাযক্রম শুরু করেন। তবে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই ক্লিনিকটিতে রোগী ভর্তি এবং অস্ত্রপাচার চালাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখানে নেই সার্বক্ষণিক চিকিৎসক।একই ভাবে দোয়েল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গর্ভবর্তী রোগি ভর্তি করে অকারণে অস্ত্রপাচার করতে বাধ্য করেন রোগির স্বজনদের। এই অভিযোগ রয়েছে দোয়েল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার বিরুদ্ধে। এদিকে নিউ পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে সেবা নিতে যাওয়া রোগিদের কারণে অকারণে টেস্ট দিয়ে হয়রানি ও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তালতলী ডিজিটাল ডায়াগনোস্টিক সেন্টারেও এমন অভিযোগ আছে। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নামে প্রতিদিন অতিরিক্ত মাইকিং এ অতিষ্ঠি সচেতন মহল।
এসব ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা শতাধিক ভুক্তভোগী রোগিদের সাথে কথা বললে তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, তালতলীতে যে কয়টি ক্লিনিক রয়েছে তারা টেস্টের নামে আমাদের হয়রানি করে আসছে। এ ছাড়াও টেস্টে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। আমরা গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখাতে আসি, আমাদের এমন ভাবে হয়রানি করলে কার কাছে বিচার দিবো ও সঠিক সেবা পাবো।
এবিষয়ে তালতলী ইসলামী হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মাসুম ফরাজী বলেন,আমাদের সকল কাগজপত্র স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর চালান ফরমও আমাদের কাছে আছে। অস্ত্রপাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষটি এড়িয়ে যায়।
নিউ পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিক মো.আবুল বাসারকে মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন বলেন, লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে সেগুলো বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের জানালে আমরা মোবাইল কোর্ট করবো।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতা ডা. আবদুল মুনয়েম সাদ বলেন, সরেজমিনে ভিজিট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন,ক্লিনিকাল লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্রপাচার ও মেজর কোনো সার্জারি করার সুযোগ নেই এই সব লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর।
সিভিল সার্জন অফিসার ডা. মারিয়া হাসান বলেন, তালতলীতে কয়েটা ক্লিনিকের আবেদন আছে সে গুলো ভিজিট করার কথা রয়েছে। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকতাকে লাইসেন্স ছাড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তালিকা পেলে প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441