প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ৩:১৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৯, ২০২৩, ১:০৫ অপরাহ্ণ
দ্রুত বীর্যপাত বা Premature Ejaculation বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত বীর্য পাতের চিকিৎসা ও ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দ্রুত বীর্যপাত রোধে বেশিরভাগ মানুষ সেবন করছে যৌন উত্তেজক ঔষধ যা আরো বেশি ক্ষতিকর। প্রথমে আমাদের জানতে হবে যে দ্রুত বীর্যপাত কি এবং এটি কেন হয়।
দ্রুত বীর্যপাত কি?
দ্রুত বীর্যপাত বলতে বোঝায় যৌন মিলনের সময় সঙ্গীর শারিরিক সুখ উপলব্ধি হবার আগেই পুরুষের বীর্য ধরে রাখতে না পারার অক্ষমতাকে। কত মিনিটকে দ্রুত বীর্যপাত বলা হয় এটা সঠিকভাবে বলা মুস্কিল। তবে একজন সুস্থ্য পুরুষ প্রথমবার মিলনে সর্বোচ্চ ১ বা ২ মিনিট সময় পাবেন। কিন্তু ২য় বার মিলনের ক্ষেত্রেও যদি এই সময় ২-৩ মিনিট হয় তাহলে সেটাকে দ্রুত বীর্যপাত হিসেবে ধরা যায়।
তবে সময়ের ব্যাপার টা দেশ এবং অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন হতে পারে। যেমন আফ্রিকা কিংবা আরবের একজন মানুষ ন্যাচারাল ইজাকুলেশনের জন্য যতটা সময় পাবেন সেই তুলনায় এশিয়া মহাদেশে মানুষ কম সময় পাবেন। আর এজন্যই কতটুকু সময় পেলে সেটা প্রিমেচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত বীর্যপাত হিসেবে গণ্য হয় তার সঠিক কোন হিসেব এখন পর্যন্ত মেডিকেল সাইন্সে নেই।
দ্রুত বীর্য পাতের লক্ষণসমূহ
১। কখনো ২ মিনিটের বেশী বীর্য ধরে রাখতে পারেন না।
২। সব সময় বা ৭৫ থেক ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঙ্গিনীর পূর্বেই বীর্যপাত হয়।
৩। সঙ্গিনীর সাথে যৌন অসন্তোষ বা দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকে।
৪। সঙ্গিনীর মেজাজ সবসময় খিটখিটে হয়ে থাকে।
৫। সহবাসে নিজে তৃপ্ত না হওয়া।
এই লক্ষণ গুলি যদি কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় তবে বুঝতে হবে যে তিনি দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যায় ভুগছেন।
দ্রুত বীর্য পাতের কারণ
Premature Ejaculation বা শীঘ্র পতন এর অনেক কারণ থাকতে পারে। শারীরিক কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলঃ
- মুত্রথলির সংক্রমণ
- ডায়বেটিস
- থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
- সিফিলিস
- গনেরিয়া
- হৃদরোগ
- মাদক সেবন
- ধূমপান করা
- অতিরিক্ত মদ বা অ্যালকোহল সেবন
- কোন কারণে লিঙ্গ বা স্নায়ু তন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হলে
- বিভিন্ন ঔষধ সেবনের কারণে।
মানসিক কারণ গুলো হলোঃ
- মানসিক চাপে থাকা
- সেক্স সম্পর্কে ভয় বা ভুল ধারণা
- অতিরিক্ত উত্তেজিত থাকা
- শারীরিক দুর্বলতা
- সঠিক জ্ঞানের অভাব
- নিজেকে ব্যর্থ ভাবা
- বিকৃত যৌনাচার
- দাম্পত্য সম্পর্কে অবনতি
- অল্প বয়সে যৌনাচার করা
- দীর্ঘ দিন পর পর সহবাস করা।
এই সকল মানসিক কারণে দ্রুত বীর্যপাত দেখা দিতে পারে।
দ্রুত বীর্য পাতের চিকিৎসা
দ্রুত বীর্য পাত থেকে মুক্তি পেতে আগে মানসিক ভাবে শক্ত হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন এবং কার্যকরী খাবার গ্রহন সবচেয়ে ভালো কাজ করে থাকে। এর পাশাপাশি সহবাসের সময় কিছু টেকনিক অবলম্বন করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে ৯৫% রোগীই সুস্থ হয়ে যায়।
দ্রুত বীর্য পাতের প্রাকৃতিক চিকিৎসা
১। মিলন চলাকালে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিবেন।আপনি যখন চরম মুহূর্তে যাবেন,তার একটু আগে গভীর শ্বাস বন্ধ রাখুন। এটা আপনার বীর্যপাতের রিফ্লেক্সটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এভাবে কয়েকবার করুন,আগের তুলনায় সময় কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে।
২। ২৪ঘন্টার মধ্যে একের অধিকবার মিলন। এতে লিঙ্গের সেন্সিটিভিটি নিয়ন্ত্রণে আসবে।সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে বীর্য না থাকার কারণে বীর্যপাত হতে বেশ সময় লাগবে। যাদের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা,তারা গ্যাপে গ্যাপে মিলন করলে প্রথমবার খুব একটা সময় বেশি পাবেন না। কিন্তু নিয়মিত করলে সময় বাড়বে।
৩। ব্ল্যাক কফি বা তরমুজের জুস,যেকোনো ধরনের উত্তেজক খাবার মিলনের আগে ও পরে খেলে শারীরিক উত্তেজনা বজায় থাকে। কফির মধ্যে ক্যাফেইন থাকে,যা মনকে সতেজ ও চাঙ্গা করে।
৪। লিঙ্গের মাথায় অবশকারক জেল বা স্প্রে ব্যবহার করা। তবে যাদের লিঙ্গের শীতলতার সমস্যা আছে তাদের জন্য ব্যবহার না করাই উত্তম।
৫। মিলনের মাঝে ছোট ছোট বিরতি নেয়া। এতে বীর্যপাতের প্রবণতা কমে যায়। যদিও এই পদ্ধতিটা নারীদের জন্য একটু বিরক্তিকর, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। সুবিধা পাবেন কয়েকমাস অনুশীলন করতে পারলে৷ একটানা নিয়মমাফিক করতে থাকলে বীর্যপাত সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
৬। বিভিন্ন প্রকার আসন- যা সহবাসের সময় দীর্ঘায়িত করে। এটা মনে রাখা দরকার যে,এক এক দম্পতির জন্য এক এক আসন উত্তম। বেস্ট মিলনের আসনের জন্য আপনাকে দশেরও বেশি আসনে চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারেন।
৭। লিঙ্গ সঞ্চালনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা। শুরুতে ছোট ছোট গতিতে লিঙ্গ সঞ্চালন করা, তবে সেটা গভীর হতে হবে। এমনভাবে সঞ্চালন করা যাবে না যেন লিঙ্গের মাথায় সেনসেশন বেড়ে যায়৷ একটু সতর্কভাবে কোনাকুনি বা এঙ্গেলে লিঙ্গ সঞ্চালন করতে হবে।
মনটাকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া৷ বারবার যদি মনে করেন এই বুঝি বের হলো তবে আপনি পারবেন না৷ সত্যি বলছি, আপনি এটা থেকপ মুক্তি পেতে হিমশিম খেয়ে যাবেন। মনে করবেন আপনি অবশ্যই দীর্ঘ সময় নিয়ে মিলন করছেন, প্রতিদিন কয়েকবার ভাববেন। তবে একদিন সত্যি হবে ইনশাআল্লাহ্। মিলনের সময় অনেকেই কঠিন হিসাব নিকাষ করে মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে মিলনের সময় বৃদ্ধি করে।
৯। ফোরপ্লে অধিক সময় নিয়ে করতে হবে সঠিক নিয়মে। এখানে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। কম উত্তেজিত জায়গা থেকে শুরু করে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ জায়গার দিকে যেতে হবে।ক্লাইটোরিস,জি স্পট সম্পর্কে জানতে হবে।ফোরপ্লে স্বামী স্ত্রী দুইজনেই সমানভাবে করতে পারলে উপকার বেশি পাবেন।
দ্রুত বীর্য পাতের ঘরোয়া চিকিৎসা
তলপেটের পেশিগুলোকে শক্ত মজবুত দৃঢ় করতে পারলে সহবাসে সময় বৃদ্ধি পাবে। যেমন কেগেল, ইড়া পিঙ্গলা নাড়ির ব্যায়াম। এক্ষেত্রে কেগেল ব্যায়াম সবচেয়ে বেশী কার্যকরী। যেভাবে কেগেল ব্যায়াম করবেনঃ
- প্রথমে ঢিলাঢালা কোন কাপড় পরিধান করে সমান জায়গায় বা বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন।
- এরপর আস্তে আস্তে কোমর বিছানার সাথে লাগিয়ে রেখে দুই পা একসাথে উপরে তুলুন।
- পা ওপরে তোলার সময় দুইহাত বিছানায় টান করে লাগিয়ে রাখবেন।
- এবার ১০ সেকেন্ড রাখার পর দুই পা আস্তে আস্তে নিচে নামান।
- তারপর আবার ঠিক একইভাবে পা উপরে তুলুন এবং নামান।
এভাবে প্রতিদিন ২০ মিনিট ব্যায়াম করলেও ঘরোয়া উপায়েই শীঘ্রপতন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শীর্ঘ্রপতনের স্থায়ী চিকিৎসা ও ওষধ
দ্রুত বীর্য পাতের স্থায়ী চিকিৎসা হল প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন এবং নির্দেশিত খাবার খাওয়া। যদি বিশেষ কোন শারীরিক সমস্যা না থাকে তবে প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া উপায়েই এটি নির্মুল করা যায়। কিন্তু অন্য কোন রোগ থেকে এর সৃষ্টি হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দ্রুত বীর্য পাতের চিকিৎসায় খাবার
কি খেলে বীর্য অনেক ঘন হয় এবং দ্রুত বীর্য পাত বন্ধ হয় এই চিন্তা আমাদের মাথায় সবসময়েই চলতে থাকে। এটাও সত্যি যে ধরণের রোগের চিকিৎসায় খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক খাবার রয়েছে যেগুলি শীর্ঘ্রপতন রোধ করে। নিম্নে বর্ণিত খাবার গুলি নিয়মিত খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- প্রতিদিন সকালে ও রাতে খেজুর খান। খেজুর মানবদেহে শারীরিক ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।
- যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, যদি কোন ব্যাক্তি প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ ও একটি করে ডিম খায় তাহলে তার কখনো যৌন সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবেনা।
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এমন খাবার গ্রহন করুন। যেমনঃ সূর্যমুখী ফুলের বীজ, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম ও মিষ্টিকুমড়ার বীজ।
- প্রতিদিন রসুন খান। সবচেয়ে ভালো হবে যদি কাচা রসুন ঘিয়ে ভেজে প্রতিদিন খাওয়া যায়। এভাবে না পারলে তরকারি তে এবং বিভিন্ন খাবারের সাথে রসুন খাওয়ার চেস্টা করুন। রসুন যৌন ও হৃদরোগে অত্যন্ত কার্যকরী।
- তাছাড়া তরমুজ, পেয়ারা, আঙ্গুর, কমলা লেবু, মাল্টা, ডালিম প্রচুর পরিমাণে যৌন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- গরুর লাল মাংশ ও এক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী।
সতর্কতাঃ গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার, ওঝা এবং নিজে নিজে ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন। এতে প্রবল ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
পরামর্শেঃ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম
MBBS, MPH (Dhaka)