রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা ২০১৫ এর শর্ত শিথিল করে নিয়োগ নীতিমালা 'নিম্নগামী' করার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষকের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৩ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নিলীমা আফরোজ স্বাক্ষরিত পৃথক পত্রে এই কৈফিয়ত চাওয়া হয়।
তবে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনভাবে জড়িত না থেকেও দু'জন শিক্ষকের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। ওই দুই শিক্ষক হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক ড. এম মজিবুর রহমান ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী ইসলাম।
শিক্ষকদের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো পৃথক চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা ২০১৫ এর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে ২০১৭ এর পরিবর্তিত নীতিমালা অনুযায়ী উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই নীতিমালা পরিবর্তন এবং শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ততা আছে বলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
পত্রে বলা হয়, এই নিয়োগের কারণে দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে এবং শিক্ষা ও গবেষণার মান নিম্নগামী করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পত্রে জবাব দিতে সময় বেধে দিয়ে বলা হয়, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকার কারণে আপনার বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে পত্র পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে কৈফিয়ত দেয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালে আইন বিভাগের তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে ২০১৫ সালের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে ওই তিনটি পদের বিপরীতে মাত্র পাঁচটি আবেদন জমা পড়ে।
এ নিয়ে ২০১৭ সালের ১৮ জুন আইন বিভাগের সভাপতি জনাব আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদের সভাপতিত্বে প্ল্যানিং কমিটির ১২৯ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিভাগের ক্লিনিক কমিটির সদস্য ছিলেন- অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদ, অধ্যাপক বেগম আসমা সিদ্দিকা, অধ্যাপক এম আনিসুর রহমান, অধ্যাপক এম আহসান কবির, অধ্যাপক মো. আব্দুল হান্নান ও অধ্যাপক মো. হাসিবুল আলম প্রধান।
তিনটি পদের বিপরীতে মাত্র পাঁচটি আবেদন অপর্যাপ্ত প্রতীয়মান হওয়ায় বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, উক্ত আবেদন বাছাই করা হবে না। পাশাপাশি নিয়োগের যোগ্যতা শিথিল করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর সুপারিশ করা হয়।
পরে আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা শিথিলের জন্য সুপারিশ করে।
এর প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৪৭২ তম সিন্ডিকেট সভায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতি সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর না করার জন্য এবং ২০১৫ সালের প্রভাষক অথবা সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক অথবা অধ্যাপক নিয়োগ ও আপগ্রেডেশন নীতিমালাটি বাতিল করে আগের নীতিমালা পুনর্বহালের জন্য শিক্ষক নিয়োগ ও আপগ্রেডেশন নীতিমালা যুগোপযোগী করতে সুপারিশ প্রদানে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে।
ওই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং সদস্য সচিব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি, আইন অনুষদের তৎকালীন ডিন, বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক কৈফিয়ত তলবের চিঠিতে বলা হয়েছে, 'শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন এবং শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ততা আছে বলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।'
কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের সঙ্গে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম মজিবুর রহমান ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী ইসলাম কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ প্রদানে গঠিত কমিটিতেও তারা সদস্য ছিলেন না। এছাড়া আইন বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হলেও ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী ইসলাম প্ল্যানিং কমিটির সদস্য ছিলেন না।
নীতিমালা পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত না থেকেও কৈফিয়ৎ তলব করায় এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ইউজিসি তদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441