রাজশাহীঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজশাহী নগরীতে শুক্রবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পুলিশের পাহারায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ-সমাবেশ। এসব কর্মসূচি থেকে স্লোগানে স্লোগানে ধর্ষকদের বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।
জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইসলামী দলগুলো। সাহেরবাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গন থেকে দুটি মিছিল বের করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং সর্বস্তরের ইমাম ও ওলামা মাশায়েখ। ধর্ষণবিরোধী নানা কথা লেখা ব্যানার- ফেস্টুন নিয়ে মিছিল দুটি নগরীর প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ শেষে একই স্থানে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিলের আগে থেকে পাহারা দেয় পুলিশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজশাহী নগর শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম। বক্তব্য দেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা তাজুল ইসলাম, ফয়সাল হোসেন মনি, তারিফ উদ্দীন, বোরহান উদ্দীন, মরসেদ আলম, ছাত্রনেতা জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ থেকে বক্তরা বলেন, দেশে আজ যে ভাবে অপরাধ বেড়েছে, এটা মেনা নেওয়া যায় না। অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ধর্ষক, হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হলে তারা অপরাধ করতে ভয় পেতো।
তারা বলেন, আমরা চাই ধর্ষকদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিলো মানুষ তার অধিকার, ইজ্জত নিয়ে বেঁচে থাকবে। অপরাধী যে হোক না কেন, সে শাস্তি পাবে। তারা আরও বলেন, এখনও নারীর স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী নারী, এর পরেও দেশের নারীরা আজ শঙ্কিত। নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে। এটা মেনে নেয়া যায় না।
এর আগে সকালে দেশব্যাপী ধারাবাহিক ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে নগ্ন পদযাত্রা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ খান। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে তিনজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে তিনি এই খালি পায়ে এই যাত্রা শুরু করেন। তার এই পদযাত্রা নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান নিয়ে তিনি সচেতনতামূলক বার্তা দেন। অধ্যাপক ফরিদ খান বলেন, আমরা চাই ধর্ষণমুক্ত একটি সমাজ। সামাজিক আন্দোলন ছাড়া এটি সম্ভব নয়। নারীদের প্রতি সম্মান জানাতেই আমার এই নগ্ন পদযাত্রা।
এদিকে নগরীতে পুলিশের বাধায় শিক্ষার্থীদের ধর্ষণবিরোধী একটি সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে। সকালে শিক্ষার্থীরা মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এই সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য সকালে বেশ কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী সাহেববাজার বড় মসজিদের সামতে জড়ো হতে শুরু করেন। তখন নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মনসহ পুলিশের একটি দল বাধা দেয়। পুলিশের বাধার মুখে পড়ে শিক্ষার্থীরা সমাবেশ না করে ফিরে যান।
নোয়াখালী, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশব্যাপী সংগঠিত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার থেকে রাজশাহীতে মানববন্ধন-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসব কর্মসূচিতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, রক্তবন্ধন, ইয়্যাস, সূর্যকিরণ বাংলাদেশ, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন একাত্বতা জানিয়ে অংশ নিচ্ছে।
শুক্রবার এ সকল সংগঠনের কর্মসূচি ছিল না। তারা শনিবার ও রোববার আবারও কর্মসূচি পালন করবে। তবে এসব সংগঠনের বাইরে কিছু শিক্ষার্থী শুক্রবার সমাবেশ করার চেষ্টা করেও পারেনি।