বরগুনার তালতলীতে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা নাসির উদ্দিন মুন্সীর ব্যক্তিগত মাছ চাষের কারণে একটি কালভার্ট দিয়ে লবণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে প্রতিনিয়ত বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ৩’শ একর জমির ধান, ভুট্টা ও গমসহ রবিশস্য চাষ করা ৮ শতাধিক কৃষক। কৃষি বিভাগ বলছে এতে চাষিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জানা গেছে, উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে চলতি বছর প্রায় ৩’শ একর জমিতে ধান, তরমুজ, ভুট্টা, ঢেঁড়স, মিষ্টিকুমড়া, গম, সূর্যমুখী, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির চাষাবাদ করা হয়েছে। সম্প্রতি জমির চারাগুলো জমিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় নাসির উদ্দিন মুন্সীর ব্যক্তিগত মাছ চাষের কারণে একটি কালভার্ট দিয়ে নদীর লবণ পানি জমিতে প্রবেশ করায় এসব চারা লালচে বর্ণের হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেতের চারা মরে গেছে। জমি শুকিয়ে যাওয়াতে মিঠা পানি দিতে পারছে না। এজন্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রায় ৩’শ একর জমির ধান, ভুট্টা ও গমসহ রবিশস্য। সর্বশান্ত হয়ে যাবে প্রায় ৮ শতাধিক ভুক্তভোগি কৃষকরা।
সোমবার(১২ মার্চ) দুপুরে ঔ এলাকায় গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার কালভার্ট দিয়ে লবন পানি অনবরত উঠতেছে। এতে কৃষকদের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে। ভয়ে নিরবে প্রতিবাদও করতে পারছে না। তাদের দাবি এই ক্ষয়ক্ষতির পূরণের দায় ঔ নেতার নিতে হবে।
এলাকার একাধীক কৃষক জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা নাসির উদ্দিন মুন্সীর সরকারী খাল লিচ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে মাছ চাষের কারণে ও তার কালভার্টটির ঢাকনা খুলে দেওয়াতে অনবরত নদীর লবণ পানি জমিতে যাচ্ছে। সম্প্রতি নদীর জোয়ারের পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তার কালভার্ট দিয়ে লবণ পানি ক্ষেতে বপনকৃত সবজি ক্ষেতে সয়লাব হয়ে যায়। এর প্রতিবাদ করতে গেলে নাসিরের লোকজন আমাদের মারধর করেন। ভয়ে চুপচাপ হয়ে থাকি। কিন্ত এই ফসল নষ্ট হয়ে গেয়ে আমাদের পথে বসতে হবে। সরকারের কাছে এঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন এলাকবাসি।
বাদুরগাছা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমির হোসেন বলেন, আমি কড়া সুদে টাকা নিয়ে ৬৬ শতাংশ জমিতে রবি ফসল করেছি। কিন্তু নাসির মুন্সীর কালভার্ট দিয়ে অবাদে নদীর লবণ পানি ওঠানামা করায় এখন বীজতলার গজিয়ে উঠে ধান হওয়া শুরু করেছে কিন্তু মিঠা পানি দিতে না পারায় ধাণে বীচ গুলো লালচে বর্ণের হয়ে মরার উপক্রম।
এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন মুন্সী বলেন, আমার লিচ নেওয়া ও ব্যক্তিগত জমি দিয়ে যে খাল বয়ে গেছে তাতে আমি লবন পানি উঠিয়েছি। এখানে কোনো বাঁধ কাটা হয়নি। কালর্ভাট দিয়ে পানি উঠানো হয়েছে। এতে কারও কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। এতো দিন চেয়ারম্যানের অনুরোধে এই সব কৃষকদের মিঠা পানি দিয়ে সহযোগিতা করেছি। এখন আমার মাছ চাষ করা লাগবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আরিফুল রহমান বলেন,এই খবর পেয়ে ঐ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার জন্য আমাদের একজন উপ-সহকারী পাঠানো হয়েছে।এই বছর তেমন বৃষ্টি না হওয়াতে কৃষকরা চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিলো আর ঐ খালে যে পরিমান পানি ছিলো তাতে কৃষকরা ভালোভাবে চাষাবাদ করতে পারতো। কিন্তু খালের বাঁধ দিয়ে লবন পানি উঠানোর জন্য কৃষকরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিলে কে এই কাজ করছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাওছার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কৃষকরা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।