১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবির) তিন শহিদ বুদ্ধিজীবী শিক্ষকের প্রয়াণ দিবস প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ শনিবার (১৯ মার্চ) বিশ্ববিদালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত ১৬ মার্চ রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১২ তম সিন্ডিকেট সভার ৫৭ নং প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত তিন শিক্ষকের প্রয়াণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হলো।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক শহিদ সুখরঞ্জন সমদ্দার, গণিত বিভাগের শিক্ষক শহিদ হবিবুর রহমান ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শহিদ মীর আব্দুল কাইয়ুমের প্রয়াণ দিবস স্ব স্ব বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের নামের স্থাপনাগুলোতে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থাপনাগুলোর দায়িত্বে নিয়োজিতদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তিনজন শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, সুখরঞ্জন সমাদ্দার তাদের একজন। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা রাজশাহী শহরে প্রবেশ করে। সেদিন সন্ধ্যায় যুদ্ধে আহত একজন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ইপিআর সেনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুখরঞ্জন সমাদ্দারের বাসায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ওই ইপিআর সেনাকে আশ্রয় দিলে বিপদ হতে পারে জেনেও তিনি তাকে আশ্রয় দেন ও তার রক্তাক্ত ক্ষতস্থান বেঁধে দিয়ে সারা রাত তার সেবা করেন। পরদিন ১৪ এপ্রিল সকালে পাকিস্তানি সেনারা সুখরঞ্জন সমদ্দারকে ধরে নিয়ে যায়। ঘাতকেরা তাকে সেদিনই নির্মমভাবে হত্যা করে ফেলে রেখে দেয়। তার বাসার গোয়ালা গুলিবিদ্ধ সুখরঞ্জনকে মাটিচাপা দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার দেহাবশেষ তুলে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে পুনঃসমাহিত করে।
১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী গণিত বিভাগের শিক্ষক হবিবুর রহমানকে তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যলয়েই থেকে যান এবং এখানে অবস্থানরত বিভিন্ন মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নানা সহযোগিতা করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজশাহী শহর থেকে মীর আবদুল কাইয়ুমসহ মোট ১৪ জনকে (মতান্তরে ১৭ জন) আটক করে। তারপর তাদের পদ্মা নদীসংলগ্ন বোয়ালিয়া ক্লাবের কাছে নিয়ে হাত বেঁধে জীবন্ত মাটিচাপা দেয়। স্বাধীনতার পর ৩০ ডিসেম্বর স্থানীয় লোকজন এই গণকবর চিহ্নিত করে। সেখান থেকে মীর আবদুল কাইয়ুমসহ সবার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সবার হাত পেছনে বাঁধা ছিল। তাঁকে পরে কাদিরগঞ্জে সমাহিত করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441