ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ছাড়াও যে দেশের আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব সেটা আবারও প্রমাণ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের আগে বিগত ১১ বছর পাঁচ মাস ধরে দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এমন কোনো মাস ছিল না, যে মাসে দু-একজন ক্রসফায়ারে নিহত হননি। তবে দীর্ঘ ১১ বছর পর সেপ্টেম্বরে দেশে কোনো ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কক্সবাজারের টেকনাফে মেজর সিনহা পুলিশের গুলিতে বিচার বহির্ভূত ভাবে নিহত হওয়ার পর দেশে আর এধরণের একটা ঘটনাও ঘটেনি। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ওপর একটা ঝাঁকুনি লেগেছে। যা আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশের কোথাও ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। প্রায় এগারো বছর পাঁচ মাস পর সেপ্টেম্বর মাসে কোনো ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ২০০২ সালের শুরুতে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। এরপর ২০০৪ সাল থেকে র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক নিহত হওয়ার নতুন নতুন ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন সংস্থার হিসেব বলছে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৩ হাজার ৪৪ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযানে বিচার বহির্ভূত হত্যার সংখ্যা বেড়ে যায়।
এদিকে সেপ্টেম্বর মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড না থাকার বিষয়কে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে গবেষকরা বলছেন, এই ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেল, সরকার চাইলেই এধরণের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে পারে।
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনেও বিশ্লেষকরা কথা বলছেন গণমাধ্যমে। অনেকেই মনে করছেন, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরেই ক্রসফায়ার নাটকের লাগাম টানতে বাধ্য হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগে কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার সর্বশেষ দুজন হলেন- মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান ও সিলেটের আবদুল মান্নান ওরফে মুন্না আহমদ। মুন্না আহমদকে ২ আগস্ট ও মেজর সিনহাকে ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441