বছর খানেক আগে দুজনের ফেসবুকে পরিচয়। মেসেঞ্জারে কথার এক পর্যায়ে গড়ে উঠে তাদের সখ্যতা। এরপর শুরু হয় নিয়মিত ফোনালাপ। ধীরে ধীরে ভালো সম্পর্ক থেকে তারা জড়িয়ে পড়েন প্রেমে। এমনকি প্রেমের টানে সুনামগঞ্জ থেকে সেই তরুণ আসেন বগুড়ায়।
বগুড়ায় বাস থেকে নেমে দেখলেন তার অপেক্ষায় এক মধ্য বয়সী নারী আছেন দাঁড়িয়ে। প্রথম আলাপে তাকে ওই নারী জানালেন তার প্রেমিকার মা তিনি। এ কথা শুনে তরুণের মনে জাগল খুশি। ভাবলেন প্রেমিকার বাড়ির সবাই রাজি। ঠেকাবে আর কে তাদের বিয়ে! খুশি মনে ওই নারীর সঙ্গে গেলেন তার বাড়ি। এরপরই ঘটল বিপত্তি। ওই তরুণ যা জানতে পারলেন, এতে তার চোখ উঠল কপালে! তার প্রেমিকা আর অন্য কেউ নয়! স্বয়ং মধ্য বয়সী ওই নারী নিজেই। তার সঙ্গেই হয়েছে মুঠোফোনে আলাপ ও ফেসবুকে প্রেম!
ছেলেটি বুঝতে পারলেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। কিন্তু তখন আর কিছুই করার রইল না তার। তাকে জোর করে বসানো হয় বিয়ের পিঁড়িতে। এখন তার স্ত্রী ৪০ বছর বয়সী ওই নারী! স্বামী পরিত্যক্ত ওই নারী তিন সন্তানের জননী।
ঘটনাটি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউপির পারতেখুর পূর্বপাড়া গ্রামের। ওই তরুণকে প্রতারিত করা নারীর নাম সখিনা বেগম। পারতেখুর গ্রামে ১৭ দিন ধরে ওই তরুণকে আটকে রাখা হয়েছে। তবে, ওই নারী বলছেন তারা বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন। কিন্তু প্রতারণার জাল থেকে মুক্তি পেতে সারাক্ষণ ছটফট করছে ওই তরুণ। তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসছেন না কেউ। এমনকি পুলিশ গিয়েও তাকে রক্ষা না করে ওখানেই রেখে আসে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগী তরুণের নাম জয়নাল সাগর ওরফে সোহাগ। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার রাজারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম ইব্রাহিম হোসেন।
পুলিশ বলছে, সোহাগের বয়স ২২ বছর, যা ছেলেটি নিজেই বলেছেন। আর তিনি স্বেচ্ছায় সখিনা বেগমকে বিয়ে করেছেন। তারা ভালো আছেন।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, সোহাগের বয়স ২০ বছরের বেশি হবে না। কম বয়সী ছেলের বিয়ে হওয়াটা দেশের আইন বিরোধী। তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে। বিয়ের কাগজপত্রও সঠিক নয়। শুধু মৌখিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৩ জুন বাসযোগে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় আসেন সোহাগ। তিনি ওই উপজেলার মাঝিড়াবন্দর এলাকায় বাস থেকে নামেন। ওই সময় সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সখিনা। তবে এসময় নিজের পরিচয় গোপন রাখেন সখিনা। সোহাগকে তিনি জানান তার প্রেমিকার মা তিনি। এভাবে প্রতারণা করে সোহাগকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে জোর করে ঐদিনই বিয়ে করেন সখিনা। সোহাগ ওই সময় প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করেও রক্ষা পাননি। এক পর্যায়ে শাজাহানপুর পারতেখুর পূর্বপাড়া গ্রামের স্থানীয় একজন সোহাগকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় জরুরীসেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলেও উদ্ধার হয়নি সোহাগ।
পারতেখুর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সোহাগকে জোর করে বিয়ে করেন সখিনা। বিয়ের পর থেকেই সোহাগকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হয় না। এমনকি দিনের অধিকাংশ সময়ই তাকে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়। সোহাগের সঙ্গে যা করা হচ্ছে তা অন্যায়।
সখিনা নিজের পরিচয় ও বয়স গোপন করে সোহাগের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তাকে কৌশলে নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে জোর করে বিয়ে করে আটকে রেখেছেন। গ্রামের কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলেই সোহাগ মুক্তির আবেদন করেন। প্রতারণার জাল থেকে রক্ষা পেতে চান সোহাগ। ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসেও তাকে রক্ষা করেনি।
সখিনা বেগম জানান, তিনি সোহাগকে বিয়ে করেছেন। তার ঘর-সংসার করবেন এটাই তার শেষ কথা।
ভুক্তভোগী সোহাগ জানান, তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। পরিচয় ও বয়স গোপন করে তাকে বগুড়ায় নিয়ে আসেন সখিনা। পরে সখিনা তাকে জোর করে তাকে বিয়ে করেন। তার সঙ্গে যা কিছু করা হয়েছে এবং হচ্ছে সবকিছুই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তিনি এমন বন্দি দশা থেকে মুক্তি চান।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নান্নু মিয়া জানান, সখিনা এক ছেলেকে বিয়ে করেছেন বিষয়টি তিনি জানেন। একবার তাকে এ বিষয়ে ডাকা হয়েছিল। গ্রামের কিছু মুরব্বি নিয়ে তিনি সখিনার বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই সময় সখিনা জানান ওই ছেলেটাকে বিয়ে করেছেন এবং তার সঙ্গে ঘর-সংসার করবেন। এরপরে তিনি চলে আসেন। তবে ওই সময় বিয়ের কাগজপত্র দেখেননি তিনি।
শাজাহানপুর থানার ওসি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সোহাগ নামে ওই ছেলের বয়স ২২ বছর হবে। তিনি স্বেচ্ছায় সখিনাকে বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে ওই গ্রামে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তখন সোহাগ পুলিশকে জানান তিনি ভালো আছেন। তারা সুখে ঘর-সংসার করছেন। তাকে বাড়িতে আটক করে রাখা হয়নি। যখন যা ইচ্ছা হচ্ছে, তা-ই করতে পারছেন সোহাগ। তার বাড়িতেও নিয়মতি যোগাযোগ রাখছেন সোহাগ। সখিনার সাথে তার (সোহাগ) এক বছর আগে পরিচয় হয়। পরে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তাকে আটক রাখার অভিযোগ সঠিক নয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441