ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ইস্যুতে সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বৈঠক করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বৈঠকে ম্যাক্রোঁর দেওয়া প্রস্তাবকে বাস্তবসম্মত বলে উল্লেখ করেছেন পুতিন।
রাশিয়ার ‘আগ্রাসন’ বন্ধ করতে একের পর এক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলো। সে জন্যই সোমবার মস্কোতে যান ফরাসি প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘ বৈঠকের পর ম্যাক্রোঁ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মতবিরোধ থাকলেও বেশ কিছু বিষয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে রাশিয়া একমত হয়েছে। আরও শান্তিপূর্ণ বৈঠকের রাস্তা তৈরি হয়েছে।
তবে পুতিন জানিয়েছেন, বৈঠকে ম্যাক্রোঁর দেওয়া কিছু কিছু প্রস্তাব বাস্তবসম্মত। তবে ন্যাটোর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শান্তিপূর্ণ আলোচনার রাস্তা খুলে দিয়েছে। তার দাবি, প্রেসিডেন্ট পুতিনও যুদ্ধের বিরুদ্ধে। আলোচনার মাধ্যমে যাতে যুদ্ধের সম্ভাবনা বন্ধ করা যায়, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
তবে একইসঙ্গে ম্যাক্রোঁ এটিও জানিয়েছেন যে, বৈঠকে সব বিষয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তিনি একমত হননি। ন্যাটোর অবস্থানও পুতিনের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। তার বেশ কিছু প্রস্তাব বাস্তবসম্মত। রাশিয়া যুদ্ধের বিরোধী। ফলে উত্তেজনা কমানোর জন্য আরও আলোচনায় রাজি ক্রেমলিন। কিন্তু কয়েকটি বিষয় ন্যাটোকে মাথায় রাখতে হবে। ইউক্রেন যদি এই সুযোগে ক্রিমিয়া দখলের চেষ্টা করে তাহলে রাশিয়ার সামনে যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।
রুশ প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা সমাবেশ নিয়ে বার বার চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে ন্যাটো। তারা একবারও বলছে না, রাশিয়া আত্মরক্ষার জন্য নিজের দেশের ভেতর সেনা সমাবেশ করেছে। অন্য দেশে নয়। উল্টোদিকে ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তজুড়ে একাধিক দেশে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। এ নিয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
পুতিন আরও বলেন, গোটা ঘটনায় রাশিয়াকে অপরাধী হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাশিয়া যা মেনে নেবে না। আলোচনার রাস্তা খুলতে হলে তাদের স্বার্থের দিকটিও সকলকে মাথায় রাখতে হবে।
রুশ প্রেসিডেন্টের ভাষায়, ন্যাটো একটি আত্মরক্ষামূলক বাহিনী। আগ্রাসনের কোনো অধিকার তাদের নেই। কিন্তু বাস্তবে তারা যা করছে, তা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসন ছাড়া আর কিছুই নয়।
উল্লেখ্য, কয়েকসপ্তাহ আগে রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছিল, তাদের দাবি না মানলে ন্যাটো বা তার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে তারা আর কোনো আলোচনায় যাবে না। ফ্রান্স জানিয়েছে, যে কোনো স্বাধীন দেশের ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার অধিকার আছে। এ বিষয়েও প্রথম থেকেই দ্বিমত পোষণ করছে ক্রেমলিন। মস্কোর বক্তব্য, ইউক্রেনকে কোনোভাবেই ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া যাবে না।
এদিকে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালিনা বায়েরবকের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টভলোদিমির জেলনস্কির বৈঠক বাতিল হয়ে গেছে। রাশিয়াকে মোকাবিলায় অস্ত্র দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে বৈঠকটি বাতিল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈঠক বাতিলের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের শিডিউল জটিলতার কথা জানিয়েছে ইউক্রেন।
রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে অস্ত্র চেয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু জার্মানি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে না। শুধু তা-ই নয়, ইউক্রেনে সেনা পাঠাতেও রাজি নয় জার্মানি।
ইউক্রেনের অভিযোগ, জার্মানি নিজেও অস্ত্র দিচ্ছে না, অন্য দেশকেও দিতে দিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ফের ইউক্রেন সফরে যান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালিনা বায়েরবক। জার্মানি অস্ত্র বিক্রি না করলেও দেশটি যে ইউক্রেনের পাশে আছে সেটি বোঝানোর তার এই সফরের উদ্দেশ্য।
সোমবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার সঙ্গে বৈঠক করে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষমুহূর্তে সেই বৈঠক বাতিল হয়।
ইউক্রেন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার জন্যই বৈঠক বাতিল হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জার্মানি অস্ত্র বিক্রি করতে না চাওয়ার কারণেই প্রেসিডেন্ট বৈঠক বাতিল করেছেন। তবে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বায়েরবকের বৈঠক হবে বলে ইউক্রেনের প্রশাসন জানিয়েছে।