বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট খবর প্রচার করছে : রুশ দূত
logo
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট খবর প্রচার করছে : রুশ দূত

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১৪, ২০২২ ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে অসন্তোষ জানিয়েছে রুশ দূতাবাস। দূতাবাস বলছে, এ ইস্যুতে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম পশ্চিমা গণমাধ্যমের মতো পক্ষপাতদুষ্ট খবর প্রচার করছে।

রোববার (১৩ মার্চ) ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার ভি মানতিতস্কি স্বাক্ষরিত এক খোলা চিঠিতে রাশিয়া কেন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে তা তুলে ধরা হয়।

চিঠিতে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা সংবাদ সংস্থা রুশবিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। লেখাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেগুলো প্রচণ্ড পক্ষপাতমূলক। পশ্চিমা গণমাধ্যমের দেখাদেখি বাংলাদেশেও নির্দিষ্ট কয়েকটি গণমাধ্যমে এ ধরনের প্রচারণা চলছে।

চিঠিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান প্রসঙ্গে বলা হয়, ইউক্রেনের সঙ্গে আমরা যুদ্ধে লিপ্ত নই। রাশিয়ার নিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকায় আমরা এই অবস্থান নিয়েছি। কিয়েভে বসবাসরত রুশ ভাষাভাষীদের ওপর দীর্ঘ ৮ বছর ধরে গণহত্যা চালাচ্ছে ইউক্রেন। আমরা তা প্রতিহত করতে চাই। ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ করতে চাই এবং ইউক্রেনে ন্যাটোর সামরিক ঘাঁটি স্থাপন রুখতে চাই।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ন্যাটোর শীর্ষ সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসতে ৩০ বছর ধরে চেষ্টা করছে রাশিয়া। এ ক্ষেত্রে মস্কো বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছে। ক্রেমলিনের প্রতিবাদ ও উদ্বেগের পরও ন্যাটো ইউরোপে তাদের সম্প্রসারণ চালিয়ে গেছে। রাশিয়ার সীমান্তের কাছে চলে আসছে জোটটির সামরিক সরঞ্জাম। এসবের পরও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবার সমঝোতার চেষ্টা চালানো হয়। তবে তা বিফলে যায়।

রুশ দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার তৎপরতার মধ্যে ইউক্রেনে নৌঘাঁটি গড়ে তোলা হচ্ছিল। সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের প্রক্রিয়াও চলছিল। এমন পদক্ষেপ রাশিয়ার জন্য সরাসরি হুমকির। এমনকি ইউক্রেনকে পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিধর দেশ হতেও তাগিদ দিয়েছে ন্যাটো।

রাশিয়ার পার্লামেন্টের অনুমতি নিয়ে জাতিসংঘ সনদের ৫১ ধারার সপ্তম অধ্যায় অনুসরণ করেই ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে চিঠিতে দাবি করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, শেষ সামরিক অভিযানের সময়, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এমন নথি তুলে ধরেছিল যা নিশ্চিত করে যে ইউক্রেনের কিয়েভ, লিভভ, খারকভ, ডিনিপ্রো, খেরসন, টারনোপোল, উজগোরড, ভিনিতসিয়াতে কমপক্ষে ৩০টি জৈবিক পরীক্ষাগার এবং গবেষণা কেন্দ্রের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। পেন্টাগনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিকেল ইন্টেলিজেন্সের স্বার্থে যেগুলোর অর্থায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স থ্রেট রিডাকশন এজেন্সি (ডিটিআরএ)।

ওই গবেষণার ফলাফল ইউএস আর্মি মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশাস ডিজিজেস, ওয়াল্টার রিড আর্মি ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, ইউএস নেভাল মেডিকেল রিসার্চ এবং ফোর্ট ডেট্রিকের ইউএস আর্মি বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার ল্যাব- যেগুলো আমেরিকান জৈবিক অস্ত্র কর্মসূচির মূল কেন্দ্র সেখানে পাঠানো হয়েছিল।

রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউক্রেনের গবেষণাগারে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল প্যাথোজেনগুলোর অধ্যয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল, যা বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে। যেমন- প্লেগ, লেপ্টোস্পাইরোসিস, ব্রুসেলোসিস, করোনাভাইরাস ও ফিলোভাইরাসের প্যাথোজেন।

চিঠিতে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ৫০ বছর আগে স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৭১ সালে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সক্রিয় সমর্থনে অবাঙালি প্রভুদের আধিপত্য, বাঙালি জনগণের বিরুদ্ধে হয়রানি, বৈষম্য ও সহিংসতা বন্ধ করতে বাংলাদেশিদের ৯ মাস সময় লেগেছিল। যাতে তারা স্বাধীনতা পায়, স্থানীয় ভাষায় কথা বলার অধিকার পায়।

পূর্ব ইউক্রেনের দনবাসের রুশ-ভাষী লোকেরা গত ৮ বছর ধরে একই অধিকার পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে, তারা কিয়েভের শাসকদের দ্বারা গণহত্যার শিকার হচ্ছে। একই কারণে, মাতৃভাষা বলার অধিকার নিশ্চিত করতে এবং ভাষাভিত্তিক বৈষম্যের অবসান ঘটাতে রাশিয়ার আবারও এসেছে।

চিঠিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে পক্ষপাতদুষ্ট খবর প্রচার না করার অনুরোধ করেছেন রুশ রাষ্ট্রদূত।

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।