প্রেগনেন্ট মায়েদের কাছ থেকে ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি সম্পর্কিত নানা ধরনের প্রশ্ন শোনা যায়। এই প্রক্রিয়ার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো আগের থেকেই জেনে রাখা জরুরি। আজ সেরকম ৮টি কমন প্রশ্নের উত্তর জানাবেন ডাঃ নুসরাত জাহান।
উত্তর: এই ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি প্রক্রিয়ায় নরমাল ডেলিভারির সময় যে সকল নার্ভসমূহ ব্যথার অনুভূতি বহন করে সেগুলো ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে অবশ করে দেওয়া হয়, ফলে সন্তান জন্মদানের সময় মা নরমাল ডেলিভারির পেইন অনুভব করতে পারে না। তবে এই সময়ে হাঁটাচলা বা অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। এই ব্যথানাশক প্রক্রিয়াটির নাম এপিডুরাল এনালজেসিয়া।
উত্তর: নরমাল ডেলিভারির তিনটি স্টেজ আছে, যেমন-
প্রথমে স্টেজ: লেবার পেইন শুরু হওয়ার পর থেকে জরায়ুমুখ পুরোপুরি খোলা (১০ সেমি) পর্যন্ত সময়কে প্রথম পর্যায় ধরা হয়।
দ্বিতীয় স্টেজ: জরায়ু মুখ পুরোপুরি খোলার পর থেকে বাচ্চা ডেলিভারি পর্যন্ত।
তৃতীয় স্টেজ: শেষে গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা ডেলিভারি হয়।
নরমাল ডেলিভারির প্রথম স্টেজে জরায়ুর মুখ যখন চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার খুলে যাবে এবং রোগী ব্যথা সহ্য করতে পারবে না, তখন এই অবশ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় মেরুদন্ডের ভেতরে একটি প্লাস্টিকের ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং এখান থেকে কিছুক্ষণ পর পর স্পাইনাল কর্ডের এপিডুরাল স্পেসে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়।
উত্তর: প্রথমত যেসব মায়েরা নরমাল ডেলিভারির ব্যথা সহ্য করতে চাইতো না, তারা এখন এভাবে সহজেই ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হবে। এতে নরমাল ডেলিভারির হার বেড়ে যাবে। এতে সুবিধা হচ্ছে-
সিজার পরবর্তী জটিলতা থেকে মা মুক্ত থাকবে; যেমন সিজারের জন্য কিছুটা হলেও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়, সিজারিয়ান ডেলিভারিতে ব্লিডিং ও ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা নরমাল ডেলিভারির তুলনায় বেশি থাকে। সিজারের আরো কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে অ্যাডহেশন তৈরি হওয়া অর্থাৎ পেটের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়, এছাড়াও একবার বা দু’বার সিজার হলে পরবর্তীতে আবার সিজার করার দরকার হয়। তাছাড়া, সিজারের পরে মায়ের সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সাধারণত দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে।
অন্যদিকে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হলে মা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারে। অন্যদিকে বাচ্চা নরমাল প্রক্রিয়ায় হওয়ার কারণে এদের শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জিজনিত রোগে ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে।
উত্তর: ডেলিভারির দ্বিতীয় স্টেজে মা যেহেতু জোরে পুশ করতে পারে না, তাই সাধারণ নরমাল ডেলিভারির চেয়ে এখানে সময় বেশি লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা ব্যয়বহুল। তবে এই এনালজেসিয়ার কারণে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
উত্তর: এপিডুরালের কারণে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার চান্স কমে না, তবে যেকোনো নরমাল ডেলিভারির আগে থেকে ১০০ ভাগ শিওর হওয়া যায় না যে শেষ পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই বাচ্চা হবে কিনা। অনেক সময় দেখা যায় কোনো স্টেজে এসে বাচ্চা আটকে গেলে কিংবা ফিটাল ডিসট্রেস/বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হলে সিজার করার দরকার হতে পারে।
উত্তর: যেসব মায়েদের নরমাল ডেলিভারির জন্য সিলেক্ট করা হয়, তাদের সবাই এপিডুরাল নিতে পারবেন। তবে তাদেরকে গর্ভকালীন সময়ে একবার অ্যানেস্থেসিস্ট ডাক্তারের মাধ্যমে চেকআপ করানো হয়।
উত্তর: প্রথমত, লেবার-কালীন সময়ে মা ও বাচ্চার মনিটরিং এর জন্য এক্সপার্ট ম্যান পাওয়ার বা লোকবল থাকতে হবে। একজন অভিজ্ঞ অ্যানেস্থেসিস্ট ও ইমারজেন্সি সিজার করার সুবিধা থাকা অবশ্য জরুরি। এছাড়াও মা ও বাচ্চার সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর জন্য সিটিজি মেশিন দরকার হয়।
উত্তর: সৌদি আরবে চাকুরীকালীন সময়ে এবং এদেশেও ব্যথামুক্ত ডেলিভারি করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। উন্নত বিশ্বে সব মায়েরাই এই সুবিধা পেয়ে থাকেন।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, কেন ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর তেমন কোনো অসুবিধা নেই, বরং সুবিধাই বেশি। আজ এই পর্যন্তই, আবারও চলে আসবো নতুন কোনো বিষয় নিয়ে। ভালো থাকবেন।
লেখা-
ডা. উম্মুল নুসরাত জাহান
এমবিবিএস, এফসিপিএস(অবস-গাইনী),
এম আর সিওজি (ইংল্যান্ড)
মেম্বার অফ রয়েল কলেজ, লন্ডন
কনসালটেন্ট (গাইনী)
বি আর বি হসপিটালস লি:
ইনফরমেশনঃ ০১৭৭৭ ৭৬৪৮০০-৩
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441