আইনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দেশের নাগরিকদের জিম্মি করা এখন নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। না হলে এমন বেআইনি পরিবহন ধর্মঘট করার কোনো কারণ দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শ্রম আইন অনুসারে, পরিবহন মালিকেরা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারেন, ধর্মঘট ডাকতে পারেন না। আর শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডাকলে অন্তত ১৫ দিন আগে সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেওয়ার নিয়ম। এ ক্ষেত্রে কোনোটাই মানা হয়নি।
সূত্র জানায়, আইনের বাধ্যবাধকতা কৌশলে এড়িয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে ধর্মঘট পালন করছেন।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমেছিল। সেসময় সরকার ভাড়া কমালেও পরিবহন মালিকেরা তা মানেননি। অর্থাৎ পরিবহন মালিকেরা শুধু তাদের সুবিধা আদায়ে যাত্রীদের জিম্মি করেন।
তিনি আরও বলেন, পরিবহন সমিতিগুলোর শীর্ষ পদে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রয়েছেন। বিআরটিএর কর্মকর্তারা এসব নেতার সামনে অনেকটাই অসহায়।
এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শনিবারও (৬ নভেম্বর) সারা দেশে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
রাজধানীর প্রতিটি বাসস্টপেজে দেখা গেছে গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা। শনিবার গাবতলী, মিরপুর ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
রাজধানীর খিলগাঁও বাসস্টপেজে পরিবার নিয়ে মিরপুর ২ যাবেন বলে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন মাসুমা নামের এক যাত্রী। তিনি জানান, প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কোনো গাড়ির দেখা পাচ্ছি না। ধর্মঘট অমান্য করে যে কয়েকটি গাড়ি চলছে তাতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে।
কল্যাণপুর থেকে বসুন্ধরা যাবেন রোকেয়া, তিনি বলেন, কল্যাণপুর থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। এখন বাধ্য হয়ে আমাকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে হবে।
কুষ্টিয়া যেতে গাবতলীতে মিনিট্রাকে উঠে পড়েন চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসা আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া বাসে আরাম করে গেলেও ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। এখন মিনিট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি ৪০০ টাকা ভাড়ায়।
এভাবে রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা গেছে স্টপেজগুলোতে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যাত্রী সংখ্যাও। রাজধানীর সড়কগুলোর অধিকাংশই ছিল রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার দখলে।
এদিকে, সংকট সমাধানে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে রোববার (৬ নভেম্বর) বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা না আসা পর্যন্ত পরিবহন খাতের এ অচলাবস্থার নিরসন হবে না বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। যদিও সরকারের তরফ থেকে শুক্রবার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তারপরও বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।
তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় আমাদের একটি চিঠি দিয়েছেন মালিক নেতারা। আমরা সেটি গুরুত্ব দিয়ে রোববার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছি। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তারা ধর্মঘট পালন করে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করতে পারেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি সমাধানে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবারই এর সমাধান করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তারা দীর্ঘসূত্রতা করেছে। এ কারণে ভোগান্তি হচ্ছে। এর দায় মালিকদের নয়। তবুও অনিচ্ছাকৃত এ ভোগান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
তবে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করতে বিআরটিসির বাস ও ট্রাক চলাচল করেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম।
অন্যদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষ দূরপাল্লার বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসেছেন। লাগেজ-ব্যাগ হাতে নিয়ে টার্মিনালে আসার পর জানলেন বাস চলাচল বন্ধ। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন তারা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441