পৃথিবীর অন্যতম একটি সেরা কাজ হলো রক্তদান। একজন ব্যক্তি যখন অন্যের প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্ত দিয়ে থাকেন তখন তাকে রক্তদাতা বলা হয়। মহৎ এই কাজটিকে উৎসাহিত করতে প্রতি বছর ১৪ জুন পালিত হয় বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। রক্তদানের মাধ্যমে যে কেবল অন্যের জীবন বাঁচানো সম্ভব তা নয়, এই কাজটির নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। রক্তদানের নানা বিষয় সম্পর্কে জানুন।
কারা রক্তদান করতে পারবেন, কতদিন পর পর?
১৮ থেকে ৬৫ বছরের সুস্থ মানুষ রক্ত দিতে পারবেন। তবে ওজন কমপক্ষে ৫০ হতে হবে। শারীরিক জটিলতা না থাকলে একজন সুস্থ ব্যক্তি ৩-৪ মাস অন্তর অন্তর রক্তদান করতে পারেন।
রক্তদানের জন্য রক্তে অবশ্যই ন্যূনতম হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ থাকতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে এর মাপ ১২ গ্রাম/ডিএল এবং পুরুষদের জন্য ১৩ গ্রাম/ডিএল।
কারা রক্তদান করতে পারবেন না?
সর্দি, গলা ব্যথা, পেট ব্যথা বা অন্য কোনো সংক্রমণে ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা রক্তদান থেকে বিরত থাকুন। দাঁতের ছোটখাটো চিকিৎসা করালে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা এবং বড় ধরনের চিকিৎসা নিয়ে থাকলে রক্ত দেওয়ার পূর্বে কমপক্ষে এক মাস অপেক্ষা করুন।
এইচআইভি (এইডস ভাইরাস) পজিটিভ ব্যক্তিরা রক্তদান করতে পারবেন না। ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীদের এ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
রক্তদানের উপকারিতা
নিয়মিত রক্ত দান করলে বেশ কিছু শারীরিক উপকারিতা মেলে। এমন কিছু উপকারিতা চলুন জেনে নিই।
হার্ট অ্যাটাক ও লিভারজনিত অসুখের ঝুঁকি হ্রাস: শরীরের জন্য উপকারি একটি উপাদান আয়রন। আবার এর পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৩ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেশি হলে হৃদরোগ ও লিভারজনিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত রক্তদান করলে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে হৃদরোগ ও লিভারজনিত রোগের ঝুঁকি কমে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়: মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ ক্যানসার। নিয়মিত রক্তদান এই রোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তদান করার মাধ্যমে আয়রন লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যা লিভার ক্যানসার, ফুসফুস ক্যানসার এবং অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
নতুন রক্তকণিকা সৃষ্টি: রক্তদানের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এটি স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়।
অকালবার্ধক্যের ঝুঁকি কমায়: রক্তদানের মাধ্যমে মানুষ মানসিক শান্তি ও তৃপ্তি পেয়ে থাকে। চাপমুক্ত থাকলে বার্ধক্য দেরিতে জীবনে আসে। এছাড়া রক্ত দিলে শরীরে যে নতুন রক্তকণিকা সৃষ্টি হয় তা ত্বকের কুঁচকে যাওয়া সমস্যা কমায়।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রক্তদান করলে কোলেস্টেরল, লিপিড এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস পায়। এটি দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে।
রক্তদানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী?
প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রক্তদানের কোনো ক্ষতি নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রক্তদানের ক্ষেত্রে যেন প্রতিবার নতুন/জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে রক্তদানের পর হালকা বমিভাব বা মাথা ঘোরা অনুভব হতে পারে। তবে এটি অল্প সময় স্থায়ী হয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যায়।
পৃথিবীতে প্রতিদিন রক্তের অভাবে অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। নিয়মিত রক্তদান করুন। অন্যের জীবন বাঁচবে, নিজেও সুস্থ থাকবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441