আমরা সকালে বেশি সক্রিয় থাকি নাকি রাতে বেশি সক্রিয় থাকি তার সাথে আমাদের জিন, হরমোন, বয়স, সূর্যের আলো এবং আমরা গোলার্ধের যে অংশে বসবাস করি তার প্রভাব থাকে। ফলে দেখা যায় অনেকেই দিনের থেকে রাতের বেলায় বেশি সক্রিয় থাকেন।
কিন্তু নানা প্রয়োজনে এবং সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদেরকে অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে ওঠতে হয় এবং দিনের বেলায় বেশি সক্রিয় থাকতে হয়। আসুন জেনে নিই কিভাবে জৈবিক প্রভাব কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে।
ধীরে ধীরে আপনার শোবার সময় পরিবর্তন করুন
সুস্বাস্থ্যের জন্য রাতের ঘুম ভাল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি বেশি রাত জেগে থাকতে অভ্যস্ত হন তাহলে এই অভ্যাস বদলাতে প্রতি রাতে ২০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা আগে শুয়ে পড়তে শুরু করুন। এভাবে ধীরে ধীরে কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে আপনার ঘুমোতে যাওয়ার সময়টি এমন স্থানে নিয়ে আসুন যাতে সকালে অ্যালার্ম বাজার আগেই আপনার ঘুম সম্পূর্ণ হয়।
ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন
আমাদের দেহের সার্কেডিয়ান ক্যালেন্ডার বা দেহ ঘড়ির সাথে আমাদের ঘুমোতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা নিবিড় ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই দেহ ঘড়ির ওপর আলোর একটি গভীর প্রভাব রয়েছে। সকালের নীল আলো আমাদের জেগে থাকতে উৎসাহ জাগায় আবার সন্ধ্যার কমলা আলো আমাদের দেহ ঘড়িকে ঘুমোতে উৎসাহ দেয়।
রাতে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ফলে তার স্ক্রিন থেকে নিঃসরিত নীল আলো বা ব্লু লাইট আমাদের ঘুম দূর করে দিতে পারে। তাই রাতের বেলায় বা ঘুমানোর আগে এ জাতীয় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
আরামদায়ক রাতের রুটিন গড়ে তুলুন
বিছানায় শুয়ে আলো নিভিয়ে দিলেই তা ঘুমানোর জন্য যথেষ্ট নয়। দীর্ঘদিন ধরে রাত জাগার অভ্যাস থেকে থাকলে সুন্দর একটি আরামদায়ক রুটিনের মাধ্যমে তা পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য রাতে বই পড়া, মেডিটেশন করা বা জার্নাল লেখার মতো মন শান্তকরণ অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। মন শান্ত হলে এবং শরীর শিথিল থাকলে সহজেই ঘুম চলে আসে।
ইতিবাচক অগ্রগতি লক্ষ্য করুন
ঘুমের সময় পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করার পর ধীরে ধীরে আপনি যে সব সুফল (সক্রিয়তা, প্রফুল্লতা বা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি) পেতে থাকবেন তা লক্ষ্য করুন। এটি আপনাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করবে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্যাভ্যাসের সাথে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার সম্পর্ক রয়েছে। যারা দেরি করে ওঠে তারা সাধারণত দেরি করে দিনের খাবার গ্রহণ করে, সকালের নাস্তা পরিত্যাগ করে এবং চা-কফি, সিগারেট ও অ্যালকোহল বেশি গ্রহণ করে। সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রয়োজনে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন। চা-কফি, সিগারেট ও অ্যালকোহল প্রভৃতি পানীয় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।
সকাল সকাল শরীরচর্চা করুন
গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব লোক দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন তাদের মধ্যে দেরি করে শরীরচর্চা করার প্রবণতা রয়েছে। শরীরচর্চা আমাদের ঘুমের চক্রকে প্রভাবিত করে, তাছাড়া দিনের শুরুতে শরীরচর্চা করলে তা ইতিবাচক ভাবে আপনার সক্রিয় থাকার সময়কে প্রভাবিত করবে। ফলে সময় সাথে সাথে আপনি দিনের বেলাতে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবেন এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবেন।
তবে আমাদের ঘুমের চক্রকে পরিবর্তন করতে বা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাড়াহুড়ো করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে না। শরীরকে নতুন সময়ের সাথে অভ্যস্ত হতে সময় দিন। এই প্রক্রিয়াতে আপনার অর্জিত ছোট ছোট সাফল্যগুলো ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করুন। বৃহত্তর উদ্দেশ্যের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সফলতা নিশ্চিত। তবে প্রয়োজনে অবশ্যই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441