বরগুনার তালতলী উপজেলায় ২০০৭ সালের এই দিনে (১৫ নভেম্বর) আঘাত হানে স্মরণকালের সবচেয়ে , প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, সিডর।
সিডর আঘাত হানার আগেই পূর্বাভাস প্রচারের মাধ্যমে অন্তত ৫ হাজার মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন,(সিপিপি)র স্বেচ্ছাসেবক জয়দেব দত্ত, সারা বিশ্বে পরিচিত যিনি সিডর ম্যান হিসেবে।
সে সময় তালতলীতে বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছিলেন সেচ্ছাসেবক জয়দেব দত্ত। ঝড়ের পূর্বদিন থেকেই মহাবিপদ সংকেত ১০ নম্বরে উঠে যায়। ১৫ নভেম্বর দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যায় হালকা বাতাস। রাতের আধারে তালতলী উপকূলীয় এলাকায় ভয়ংকর রুপে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন ঘুর্ণিঝড় সিডর।
রাত সাড়ে ৯টায় মুহূর্তেই ফুঁসে ওঠে পায়রা নদী। ২২০ -৫০কিলোমিটার গতিবেগে তান্ডব লীলা শুরু করে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়টির। এ সময় পায়রার পানি ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ে উপকূলের এ জনপদে। তালতলীর আশার চর, তেতুল বাড়িয়ার, নিদ্রা, ছকিনা, ফকিরহাট, অংকুজানপাড়া খোট্টার চর, ছোটবগি, এসব এলাকার বেঁড়িবাঁধের বাইরের ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগিসহ শত সহস্র মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নদীর পানি তালতলী শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে পানি চলে আসে শহরের ভেতরে। ২/৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় তালতলী বাজার। সেদিন রাতে জয়দেব নিজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র আসার জন্য পায়ে পরে অনুরোধ করেন, তার ডাকে সারা দিয়ে সেদিন ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছুটে এসেছিল। আর কিছু মানুষ জয়দেব দত্তকে পাগল বলে তার কথা উড়িয়ে দিয়েছিল। পরদিন দূর্যোগের মাত্রা থেমে গেলে ভেসে উঠে প্রকৃতির ধ্বংসলীলার প্রতিচ্ছবি। যে দিকে দু চোখ যায়, সে দিকেই ধ্বংসস্তূপ। আর বাতাসে ভেসে আসে স্বজন হারানোর হাহাকার।
সিডরের দিনে উপকূলের লাখো মানুষ মুহুর্তেই সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬৪ জন। ভয়াবহ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত। বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, নৌ ও সড়ক পথসহ আধুনিক সভ্যতার সার্বিক অবকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে তালতলী উপজেলা। গোটা বিশ্ব প্রকৃতির এ ভয়াল রুপ দেখে বাড়িয়ে দেয় সহযোগিতার হাত।
তালতলীর (সাবেক) বড়বগী ইউনিয়নের এবং বর্তমান নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজি জানান। সিডরে নিহত হয়েছেন ১৫০ জন, নিখোঁজ ১১৪ ও আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫শ জন। তবে জয়দেব দত্তের প্রাণপণ চেষ্টার কারণে তালতলীতে হতাহতের সংখ্যা কমেছে।
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত হয়েছিল জয়দেবের সে প্রচেষ্টার কথা। পূর্ব সংকেত প্রচারের জন্য ইত্যাদির পক্ষ থেকে একটি মোটরসাইকেলও পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল তাকে। এছাড়াও জাতীয় রেড ক্রিসেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০০৮ পেয়েছেন তিনি।
আজ উপকূলের সেই ভয়াল সিডরের ১৪ বছর পূর্ণ হলো। বেঁচে নেই জয়দেব দত্ত তবে তিন বেঁচে আছেন উপকূলীয় এ এলাকার লাখো মানুষের হৃদয়ে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ বেলাল রিজভী
ই-মেইলঃ news.dailybibartan@gmail.com
ফোনঃ +8801611572441