শেহবাজ শরিফ: উত্থান-পতনের ৩৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রী
logo
ঢাকা, বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেহবাজ শরিফ: উত্থান-পতনের ৩৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রী

বিবর্তন ডেস্ক
এপ্রিল ১১, ২০২২ ৮:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজনীতি শুরুর পর উত্থান-পতনের ৩৪ বছরে এসে মিয়া মোহাম্মদ শেহবাজ শরিফ সোমবার পাকিস্তানের ২৩ তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরা পদত্যাগ করায় ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে ১৭৪ ভোট পেয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

সংসদের নিম্নকক্ষে একক বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পিটিআই, তাদের সদস্য সংখ্যা ১৫৫। কিন্তু সোমবার অধিবেশন বর্জন করায় বিরোধীদের ১৭৪ ভোটের সবই পান শেহবাজ শরিফ।

১৯৫০ সালে লাহোরে জন্ম নেওয়া শেহবাজ শরিফ পাকিস্তান মুসলিম লীগ- নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা এবং তিনবারের সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। তিনি পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মুশাররফ শরীফ ভাইদের সৌদি আরবে নির্বাসিত করার আগে ১৯৯৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শেহবাজ শরিফ। পরে আরও দুই দফায় ২০০৮-২০১৩ এবং পরবর্তীতে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সর্বশেষ পিটিআইয়ের আমলে জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন তিনি। কাজপাগল হিসেবে পরিচিত শেহবাজ শরিফ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তে নিজেকে খাদিম-ই-আলা (প্রধান কর্মচারী) বলতে পছন্দ করতেন।

পাকিস্তানের মিয়া পরিবারের মিয়া মোহাম্মদ শরিফের দ্বিতীয় ছেলে শেহবাজ শরিফ। দেশটির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং ইত্তেফাক গ্রুপ অব কোম্পানির যৌথ মালিক ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

শেহবাজ ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে জাতীয় পরিষদের আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবং এমএনএ নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯৩ সালে তিনি আবারও প্রাদেশিক পরিষদের আসনে নির্বাচন করেন এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়া হলে তার মেয়াদ শেষ হয়।

১৯৯৭ সালের নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর শেহবাজ পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশের শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৯৯৯ সালে পারভেজ মুশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানের আগে পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে পাঞ্জাব প্রদেশে পিএমএল-এন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পায়। প্রায় এক দশকের নির্বাসন থেকে ফিরে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেহবাজ দ্বিতীয়বারের মতো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন।

২০০৮ সালে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের তিনটি আসন (পিপি-১৫৯, পিপি-১৬১ এবং পিপি-২৪৭) এবং জাতীয় পরিষদের একটি আসনে (এনএ-১২৯) জয় পান শেহবাজ শরিফ। তবে সব আসন ছেড়ে দিয়ে ১৫৯ আসন ধরে রাখেন তিনি। শেহবাজের ৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পাঞ্জাবে মেট্রো বাস প্রকল্প বাস্তবায়ন।

তার ছেলে হামজা শেহবাজ শরিফও একজন এমপিএ এবং পাঞ্জাবের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী তিনি। পিটিআইয়ের শাসনামলে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছেন হামজা।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লাহোরের একটি আসনে জয় পান শেহবাজ শরিফ। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের দুটি আসনেও জয় পেয়েছিলেন তিনি। পরে পিএমএল-এন এবং বিরোধী অন্যান্য দলগুলোর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কিন্তু পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খানের কাছে ব্যাপক ব্যবধানে হেরে যান শেহবাজ। প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেহবাজ শরিফ মাত্র ৯৬ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে ইমরান খান পেয়েছিলেন ১৭৬ ভোট।

শেহবাজ; ভাইয়ের অনুগত এক সহযোদ্ধা

• শেহবাজকে প্রভাবশালী এবং দৃঢ়চেতা ব্যক্তির পাশাপাশি একজন যোগ্য প্রশাসক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তিনি পাঞ্জাবের উন্নয়নমূলক কাজে দৃশ্যত ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছিলেন। পাঞ্জাবের মেট্রো বাস প্রকল্পকে প্রায়ই তার সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরা হয়।

• তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী এবং একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। দেশটির ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ইত্তেফাক গ্রুপ অব কোম্পানিতে মালিকানা রয়েছে তার। তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশটির ভিন্ন ভিন্ন প্রশাসনের আমলে নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন। যা নিয়ে তিনি গর্ব প্রকাশ করেন, বিশেষ করে লাহোরের উন্নয়ন নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই।

• সম্প্রতি এবং দূর-অতীতে ভাইয়ের রাজনৈতিক সংকটের কারণে শেহবাজ শরিফকেও নির্বাসনে যেতে হয়েছিল। নির্বাসনে গেলেও কখনও বড় ভাই নওয়াজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে কার্পণ্য করেননি তিনি।

• ২০১৮ সালের মার্চে পিএমএল-এনের সাধারণ পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন শেহবাজ। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি, নওয়াজ শরিফই পাকিস্তানের একমাত্র রাজনীতিক এবং নেতা, যাকে জিন্নাহর রাজনৈতিক উত্তরসূরী বলা যেতে পারে।

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।