ডা. জাফরুল্লাহর অনন্য সৃষ্টি ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’
logo
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডা. জাফরুল্লাহর অনন্য সৃষ্টি ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’

নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ১২, ২০২৩ ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম এলেই চলে আসে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নাম। আবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কথা কল্পনা করলেও চোখে ভেসে উঠে ডা. জাফরুল্লাহর নাম। ডা. জাফরুল্লাহ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যেন একে অপরের পরিপূরক। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতাল, যা বর্তমানে দেশের সুপরিচিত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি তার সমন্বিত সমাজ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা বা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অবদান রাখায় দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক লাভ করে।

জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে গণস্বাস্থ্যের ৪০টি মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। এগুলো সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রশংসিতও হয়েছে। এর অধীনে রয়েছে ৭টি হাসপাতাল, ডেন্টাল কলেজ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, মাসিক গণস্বাস্থ্য ম্যাগাজিন, বেসিক কেমিক্যাল কারখানা (দেশের সবচেয়ে বড় প্যারাসিটামল কাঁচামাল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান) গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যান্টিবায়োটিকের কাঁচামালের ফ্যাক্টরি। এছাড়াও সারাদেশে ৪৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেয়েদের ড্রাইভিং স্কুল, ভেটেরিনারি ফার্ম, রোহিঙ্গাদের জন্য ১৫টা মেডিকেল ক্যাম্প, এগ্রিকালচারাল ফার্ম, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ফার্ম রয়েছে।

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১৯৭১ সালের মার্চে ব্রিটেনে বসবাসরত এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসক নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। যার সভাপতি ছিলেন ডা. এ এইচ সায়েদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে বিএমএ এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে এম এ মোবিন ও জাফরুল্লাহকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার জন্য ভারতে পাঠায়। তারা বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারের সহায়তায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘরে ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেন। এই হাসপাতালের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম। যিনি তার বিশেষ অবদানের জন্য বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন।

স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল ঢাকার ইস্কাটনে পুনঃস্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের এপ্রিলে গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু রূপে গড়ে তোলার জন্য ‘চল গ্রামে যাই’ স্লোগানে হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয়। তখন নামকরণ করা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই নাম দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই হাসপাতালটি মোট ২৮ একর জমির ওপর স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ২৩ একর জমি জাতির পিতা সরকারি খাস জমি থেকে দান করেন। বাকি অংশ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বন্ধু ডা. মাহমুদুর রহমানের মা জহুরা বেগম দান করেন।

গণস্বাস্থ্যের অবদান ও প্রাপ্তি

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশের কল্যাণে কাজ করতে থাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। সারাদেশে স্বল্প মূল্যে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সর্বাধিক যে বিষয়ে অবদান রাখছে তা হলো কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ডায়ালাইসিস সেন্টার। ধানমন্ডিতে স্থাপিত এই সেন্টারে ৩০০টি বেড রয়েছে। আর ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে ১৩৫টি।

করোনা মহামারিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১৯ মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্তের কিট উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় রি-অ্যাজেন্ট আমদানির সরকারি অনুমোদন পায়। ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কাছে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ হস্তান্তর করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

১৯৭৭ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বিত সমাজ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া ১৯৮৫ সালে ম্যাগসাসে পুরস্কার, ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে রাইট লাইভহুড পুরস্কার ও ২০০২ সালে বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো পুরস্কার লাভ করে।

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।