বিশ্বের অন্যতম পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে রাশিয়ার নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাংককে বাদ দিতে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে এ মতৈক্যে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, যেহেতু রাশিয়ার সৈন্যরা কিয়েভসহ ইউক্রেনের অন্যান্য শহরে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে, সেহেতু আমরা রাশিয়াকে আটকাতে সংকল্পবদ্ধ। রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং আমাদের অর্থনীতি থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে।
রাশিয়ার নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাংককে সুইফট মেসেজিং সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়াসহ সামনের দিনগুলোতে এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটা নিশ্চিত করা হবে যে, নির্দিষ্ট ওই ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে এবং বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যক্রম চালানোর ক্ষতির মুখোমুখি হবে।
সুইফট এর পূর্ণরূপ সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন। এটি বেলজিয়ামভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা হয়। বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশে ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুইফট যুক্ত।
টানা উত্তেজনার পর অবশেষে গত বৃহস্পতিবার রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালিয়েই বসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে একঘরে করে দিতে চায় আমেরিকাসহ দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি ওঠে রাশিয়াকে বিশ্বের অন্যতম পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার।
তবে বিপরীতে প্রশ্ন ওঠে সুইফট থেকে রাশিয়ায় সেবা দেওয়া বন্ধ হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কোনো প্রভাব পড়বে কি না। এই প্রশ্নের জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে তৈরি হয় মতভেদ। তবে শেষ পর্যন্ত মতভেদের সমাপ্তি ঘটল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য আগেই গো ধরেন সুইফট থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার জন্য।
এর আগে বিবিসি জানায়, সুইফট থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া হলে দেশটির ব্যাংকিং নেটওয়ার্কে বিরাট প্রভাব পড়বে। তবে এ প্রভাব রাশিয়া ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও পড়বে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল বা গ্যাস ক্রেতা দেশগুলো পড়বে ঝুঁকিতে। সেসব দেশের আর্থিক লেনদেন সারতে ভিন্ন কোনো চ্যানেল ব্যবহারের কথা ভাবতে হবে।
সুইফট ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়াকে বাদ দিতে জোর দাবি জানিয়ে আসছিল ইউক্রেন। আসন্ন নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেন সমর্থকদের জন্য ‘বিজয়’ বলে উল্লেখ করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার। শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, সুইফট নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, তবে টেকনিক্যালি প্রিপারেশন (প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি) এবং এটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।