প্রোটিয়াদের বধ করে ঐতিহাসিক শিরোপা জয় করল টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এই প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরিয়নে প্রোটিয়াদের ৯ উইকেটে উড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে বাংলাদেশ।
ওপেনিংয়ে নেমে ক্যারিয়ারের ৫২তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। রাবাদা-এনগিডিকে দারুণ সব চারের মারে ৫২ বলে দেখা পান ফিফটির। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৯টি চারের মারে। অন্যদিকে লিটন আছেন অ্যাংকরের ভূমিকায়। তিনি দেখেশুনে খেলে তামিমকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন। দুজনের ব্যাটিংয়ে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে স্বপ্নের মত শুরু করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ : ১৫৫/১ (২৬.২ ওভার)
দক্ষিণ আফ্রিকা : ১৫৪/১০ (৩৭ ওভার)
প্রিটোরিয়াসের করা ১৭তম ওভারের চতুর্থ বল। ডাউন দ্য উইকেটে এগিয়ে এসে লং অফে তামিম পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারির বাইরে। এতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হয়ে যায়। এর আগে ছিল ৯৫। প্রথম ম্যাচে যা তামিম-লিটন করেছিলেন। পরের ওভারের প্রথম বলেই শামসিকে চার মেরে শতরান পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। লং অফে উড়িয়ে মেরেছিলেন তামিম, কিন্তু ফিল্ডার ক্যাচ ধরতে পারেননি। উলটো চার হয়ে যায়। ১৭.১ ওভারে বাংলাদেশ পার করে ফেলে ১০০ রান।
ওপেনিংয়ে নেমে ক্যারিয়ারের ৫২তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। রাবাদা-এনগিডিকে দারুণ সব চারের মারে ৫২ বলে দেখা পান ফিফটির। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৯টি চারের মারে। অন্যদিকে লিটন আছেন অ্যাংকরের ভূমিকায়। তিনি দেখেশুনে খেলে তামিমকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন। দুজনের ব্যাটিংয়ে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে স্বপ্নের মত শুরু করেছে বাংলাদেশ।
রাবাদার করা ১০ম ওভারের দ্বিতীয় বল। কাভার দিয়ে তামিম পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারির বাইরে। একবল ডট দিয়ে তারপর টানা তিন চার। চতুর্থ বলে হাঁকানো চার-তো চোখ জুড়ানো। সামনের পা হাওয়ায় ভাসিয়ে পুল করে চার। পরের বলেও পুল করে চার হাঁকান তামিম। আর শেষে শর্ট বল কাএ লাগিয়ে ফাইন লেগ অঞ্চল দিয়ে পাঠিয়ে দেন বাউন্ডারির বাইরে। ৪ চারে এই ওভারে বাংলাদেশ অধিনায়ক নেন ১৬ রান। পাওয়ার প্লেতে দারুণ করে বাংলাদেশ। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০ ওভারে সংগ্রহ ৫৮ রান।
রাবাদার করা তৃতীয় ওভারের শেষ বল। বলের গতি ব্যবহার করে কাভারে শুধু পাঞ্চ করলেন লিটন দাস। বল চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। চওড়া হয় তামিমের ব্যাটও। লুঙ্গি এনগিডিকে অষ্টম ওভারে হাঁকান টানা দুই চার। পাওয়ার প্লের সুযোগ ভালোভাবেই নিচ্ছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ১৫৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিম-লিটনে দুর্দান্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ।
১৫৫ রান করলেই সিরিজ বাংলাদেশের। এটি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়া সিরিজ জয়।
টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে তাসকিনের তোপে ১৫৪ রানে অলআউট হল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাসকিন একাই নেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে ১৬২ রান করেছিল প্রোটিয়ারা। সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন ডেবিড মালান। শেষ দিকে লড়াই করেছেন কেশম মহারাজ। তিনি ২৮ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রানআউট হোন। ৩৬তম ওভারে শরিফুলের বলে কেশবের সহজ ক্যাচ ইয়াসির আলী মিস না করলে ১৫৩ রানেই থামত দক্ষিণ আফ্রিকা। দুটি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। একটি করে নেন শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
এনগিডিকে ফেরালেন সাকিব, বাকি রইল এক। ৩৫তম ওভারের চতুর্থ বলে এনগিডিকে ফেরান সাকিব। লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু টাইমিং মিস হয়ে বল উঠে যায় আকাশে। ক্যাচ ধরতে ভুল করেননি বদলি ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত।
নিজের অষ্টম ওভারে বল করতে নেমে আরেকটি উইকেট পেলেন তাসকিন আহমেদ। ডেভিড মিলারকে ১৬ রানে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানালেন। একই ওভারের শেষ বলে কাগিসো রাবাদাকে ফিরিয়ে পঞ্চম উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশি পেসার। আগের বলে চার মেরে রাবাদা মুশফিকের ক্যাচ হন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এর আগে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন লাসিথ মালিঙ্গা, ২০১২ সালে। তাসকিনের এটি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়ার পর তাসকিন নিজের ৪৮তম ম্যাচে এসে আবার ফাইফারের দেখা পান। তাও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে।
ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে ফেরালেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের করা ২৫তম ওভারের তৃতীয় বল। এবারও এক্সট্রা বাউন্স ছুঁড়ে সাফল্য পেয়েছেন এই ডানহাতি পেসার। হাল ধরার আভাস দেওয়া প্রিটোরিয়াসের ব্যাটে লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে। ক্যাচ ধরেতে ভুল করেননি মুশফিক। ২৯ বলে ১টি করে চার-ছয়ে ২০ রান করেন প্রিটোরিয়াস।
সাকিবের পর শরিফুলের আক্রমণ, ফেরালেন ভ্যান ডার ডুসেনকে। শরিফুলের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে সাজঘরে ফিরলেন ডুসেন। এক্সট্রা বাউন্সে পরাস্ত হলেন ডুসেন। ধরা পড়েন পয়েন্টে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। ১০ বলে ৪ রান করেন তিনি। ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯ ওভার শেষ না হতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে ৮৩ রান। দুটি উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। একটি করে নেন মিরাজ, সাকিব ও শরিফুল।
তাসকিনের পর এবার আক্রমণ সাকিব আল হাসানের। ফেরালেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে। সাকিবের করা ষোলো তম ওভারের পঞ্চম বল। নিচু হয়ে যাওয়া বলে হাঁটু গেড়ে সুইপ করতে চেয়েছিলেন বাভুমা। কিন্তু আগেই ব্যাট চালিয়ে দেওয়ায় বল লাগে পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েছিলেন বাভুমা। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। তাসকিনের পর সাকিবের আক্রমণে চাপে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১১ বলে মাত্র ২ রান করেন বাভুমা।
ভেরিয়েন্নের পর এবার মালানকে ফেরালেন তাসকিন। তাসকিনের করা ১৫তম ওভারের পঞ্চম বল। বাউন্স ছুঁড়েছিলেন তাসকিন, বল হালকা মুভ করেছিল। মালান একটু এগিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বলে এক্সট্রা বাউন্স হওয়াতে পরাস্ত হন মালান। বল ব্যাটে লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে। অসাধারণ ক্যাচ ধরেন মুশফিক। শুরু থেকে বিস্ফোরক ব্যাটিং শুরু করা মালান অবশ্য এখন খেলছিলেন ধীরে ধীরে। কিন্তু আর এগোতে পারলেন না। ৫৬ বলে ৩৯ রান করেন তিনি।
কাইল ভেরিয়েন্নেকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠালেন তাসকিন আহমেদ। ১৩তম ওভারের প্রথম বলে পুল করে তাসকিনকে চার মেরেছিলেন ভেরিয়েন্নে। দ্বিতীয় বল ডটের পর তৃতীয় বলে বোল্ড। শট খেলতে যেয়ে ব্যাটে বলে ঠিকমতো সংযোগ হয়নি ভেরিয়েন্নের। ব্যাটে লেগে বল ভেঙে দেয় উইকেট। ১৬ বলে ৯ রান করেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের দেওয়া পাওয়ার প্লে’তে ১০০ রানের রেকর্ডও ভেঙে ফেলবে। কিন্তু মিরাজ ব্রেক থ্রু দেওয়ার পর খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলে বাংলাদেশ। ডি কক ফেরার আগে ৮ বাউন্ডারি। ফেরার পর মাত্র ১টি। প্রথম পাওয়ার প্লেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ১ উইকেট হারিয়ে ৫৭ রান। মালানের সঙ্গে ক্রিজে আছেন ভেরিয়েন্নে।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে ডি কককে ফেরালেন মিরাজ। চতুর্থ বলে দারুণ কাভার ড্রাইভে চার হাঁকিয়েছিলেন ডি কক। পরের বলেই ধরা পড়লেন লং অফে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। ২ চারে ৮ বলে ১২ রান করেন তিনি। আগের ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি করে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন, এই ম্যাচে আর পারলেন না।
দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার খেলছেন দারুণভাবে। পাওয়ার প্লের সুবিধা আদায় করে প্রথম ৬ ওভারে হাঁকায় ৭ বাউন্ডারি। তারমধ্যে মালান একাই ৬টি আর ডি কক ১টি।
শরিফুল ইসলামকে দিয়ে বোলিং শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এরপরে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুই পেসার আউটের সুযোগ তৈরি করতে পারছেন না। প্রথম চার ওভারে দুজনে ২৭ রান দেন। এরপরেই অধিনায়ক তামিম মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে আসেন আক্রমণে। মিরাজ এই ওভারে চার রান দেন।
শরিফুল ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বল। তার আউট সাইড অফের বল মালানের ব্যাটের কাছ ঘেষে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে। মালানের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন শরিফুল। আম্পায়ার নাকচ করলেও পরে রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাটে লাগেনি। এই ওভার থেকে আসে ২ রান।
বাংলাদেশ একাদশ :
তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ইয়াসির আলী, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।
দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ :
টেম্বা বাভুমা, জান্নেমান মালান, কুইন্টন ডি কক, তাবরাইজ শামসি, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, কাগিসো রাবাদা, কেশব মহারাজ, রাসি ফন ডার ডুসেন ও কাইল ভেরিয়েন্নে।
তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ। এই ম্যাচে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ। দুই দলই একটি করে জেতায় এখন সিরিজে সমতা। যে জিতবে তার হাতেই উঠবে ট্রফি। বুধবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় খেলাটি শুরু হয়।