আমাদের হৃদপিণ্ডে নিরবচ্ছিন্ন রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন ঘটলে তখন হার্ট অ্যাটাক হয়। সাধারণত করোনারি ধমনিতে চর্বি, কোলেস্টেরোল বা অন্য কোনো পদার্থ জমাট বাঁধার কারণে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ সমূহ
- বুকে কিংবা বাহুতে চাপ, টান বা ব্যথা অনুভূত হওয়া এবং সংকোচন বা বেদনাদায়ক সংবেদন। এটি ঘাড়ে, চোয়ালে বা পিঠে ছড়িয়ে যেতে পারে।
- বমি বমি ভাব, বদহজম, অম্বল বা পেটে ব্যথা।
- শ্বাস-প্রশ্বাস দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- ঠাণ্ডা ঘাম।
- ক্লান্তি।
- হালকা মাথা ঘোরা বা হঠাৎ মাথা ঘোরা।
তবে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। কেউ বুকে হালকা ব্যথা অনুভব করেন, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এটি তীব্র হয়। কেউ কেউ হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। আবার কেউ কেউ এমনকি কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই লক্ষণগুলো অনুভব করতে শুরু করেন।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধিকারী কারণ সমূহ
অনেক কারণেই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, ব্যক্তি বিশেষে লক্ষণ যেমন ভিন্ন তেমন এর কারণেও বৈচিত্র্য থাকে। তবে হার্ট অ্যাটাকের বেশ কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে।
বয়স
৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষদের এবং ৫৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কম বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের থেকে বেশি।
তামাক ব্যবহার
ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম একটি কারণ। পরোক্ষ ভাবে ধূমপানের ফলেও এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ সময়ের সাথে সাথে আমাদের ধমনীগুলির ক্ষতি সাধন করে যা হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের সাথে স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল বা ডায়াবেটিসের মতো অন্যান্য সমস্যা থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চ মাত্রা
উচ্চ মাত্রার নিম্ন-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) কোলেস্টেরল (ক্ষতিকর কোলেস্টেরল) ধমনী সংকীর্ণ করে দেয়। এছাড়াও রক্তে উচ্চ মাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইড (খাদ্যাভ্যাসের সাথে সম্পর্কিত রক্তের চর্বি) হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে রক্তে উচ্চ মাত্রার উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) কোলেস্টেরল (উপকারী কোলেস্টেরল) আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম করে।
স্থুলতা
স্থুলতা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এর ফলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা, ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর, রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস
আমাদের দেহে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উত্পাদন না হলে বা ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়া ব্যাহত হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং এটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
মেটাবলিক সিন্ড্রোম
স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে উচ্চ মাত্রার সুগার থাকলে এই সিনড্রোম হয়। মেটাবলিক সিনড্রোম হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ করে।
হার্ট অ্যাটাকের পারিবারিক ইতিহাস
যদি আপনার ভাইবোন, বাবা-মা বা দাদা-দাদি কারো হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে (পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর বয়সের পূর্বে) তবে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি।
শারীরিক ভাবে সক্রিয়তার অভাব
শারীরিক ভাবে সক্রিয় না থাকলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এটি স্থূলতায় অবদান রাখে। অন্যদিকে যারা নিয়মিত অনুশীলন করেন তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
মানসিক চাপ
মানসিক চাপের ফলে রক্তে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। অনেক সময় মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়ায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
অবৈধ ড্রাগ ব্যবহার
কোকেন বা অ্যাম্ফিটামিনের মতো উত্তেজক ওষুধ ব্যবহার করার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
তথ্যসূত্র: মায়োক্লিনিক