ঘুষ না দেওয়াতে বীর নিবাসের তালিকা পাঠালেন না তালতলীর ইউএনও
logo
ঢাকা, বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুষ না দেওয়াতে বীর নিবাসের তালিকা পাঠালেন না তালতলীর ইউএনও

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
মার্চ ৮, ২০২২ ৭:৩৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বরগুনা তালতলীতে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস তৈরির জন্য  তালিকা চেয়েছেন সরকার। প্রতিটি উপজেলা থেকে এ তালিকা করার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব তালিকায় নাম দিতে হলে ২০ হাজার করে টাকা চেয়েছেন তিনি। টাকা না দেওয়াতে বীর নিবাসের তালিকা না পাঠানোর অভিযোগ তালতলীর ইউএনও’র বিরুদ্ধে। এছাড়াও ইউএনও’র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে বয়কটের ঘোষণা দেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

মঙ্গলবা (০৮ মার্চ) জেলা প্রশাসকের কাছে এ অভিযোগ করেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাবেক কমান্ডার মোসলিম আলী হাওলাদার।

জানাগেছে, ২য় দ্বিতীয় পর্যায় সারাদেশের ন্যায় তালতলী উপজেলা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস তৈরির জন্য  তালিকার চাহিদা চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তে জেলা প্রশাসন কে চিঠি দেন। ওই চিঠির জেলা প্রশাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে ২০ জানুয়ারি অসচ্ছল  মুক্তিযোদ্ধারের ঘরের তালিকা করে পাঠানোর নির্দেশ দেন । কিন্তু চিঠি পেয়েই ইউএনও তালিকা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। ইউএনও দাবীকৃত ঘুষ দিতে রাজি হয়নি মুক্তিযোদ্ধারা। এ কারনে গত ৩০ জানুয়ারী বীর নিবাসের তালিকার চাহিদা তৈরির সভা ডেকে অজ্ঞাত কারনে সভা মুলতবি করেন তিনি। ঘুষের টাকা না পেয়ে ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাসের ঘর তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠায়নি বলে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোসলেম আলী হাওলাদার। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানী, ব্যঙ্গ বিদ্রেুাপ ও বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা ভবন সাজ সজ্জা না করে ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউএনও এমন অভিযোগও মুক্তিযোদ্ধাদের। তাছাড়াও এমন অসৌজন্যমুলক আচরনের কারনে গত সোমবার প্রশাসনের ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চ উদযাপন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন তারা। দ্রুত বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ইউএনও’র বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান মুক্তিযোদ্ধারা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার আজিজ আকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্তার ফরাজী, হরিপদ সরকার,ইউনুস বিশ্বাসসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা এই অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপক্ষে নয় ইউএনও কাওসার হোসেন । তিনি তালতলীর সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটুক্তি করে থাকেন। সবাইকেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে অসম্মান করেন প্রায়। জাতীয় কোন দিবসে আমাদের নিম্নতম সম্মান টুকু দেন না। আমাদের বীর নিবাসের ঘর প্রতি ২০ টাকা দাবি করেন। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।

তালতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোঃ মোসলেম আলী হাওলাদার বলেন, তালতলীর মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও কাছে অসম্মানের পাত্রে পরিনত হয়েছে। ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাদের অহরহ হয়রানী, ব্যঙ্গ ও বিদ্রোপ করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা ভবনে সাজ সজ্জা না করেই ২০ হাজার টাকা ইউএনও আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও আমাদের বীর নিবাস ঘরের তালিকা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ইউ্ওনও এমন আচারনের সুরহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার সকল কার্যক্রম বয়কট করেছি। এবিষয়ে আমি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, ইউএনও তালতলীতে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পরেছেন। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন করে আসছেন। তিনি আরও বলেন, ইউএনও উপজেলা প্রশাসনকে দুনর্ীতির আখরায় পরিনত করেছেন।

তালতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ কাওসার হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরনের কথা অস্বীকার করে বলেন, ডিপিপিতে তালতলী উপজেলায় বীর নিবাসের ঘর বরাদ্দ নেই। তাই তালিকা করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, ১০ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিতে আমার কাছে আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। আমি ওই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা  না দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন,আমি এখনো কোনো অভিযোগ হাতে পাইনি।অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।