রাহিমা বেগম(৬০),ফাতেমা বেগম(৫৫) ও জরিনা বেগম(৫০) এই তিন বোনের সেই ছোট সময়ে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় স্বামীদের অভাবের সংসারের হাল ধরেন তারা। পেটের দায়ে খালে-বিলে নিজে বড়শি দিয়ে ৩০ বছর যাবত মাছ শিকার করেন তারা। এই বড়শি ছিপে ফেলে পেটে ভাত জোটে তিন বোনের। এই তিন বোনের বসবাস করার ঘরগুলোও তেমন ভালো নেই। কষ্টের ভিতরেই কোনো মতে দিন রাত কেটে যায়।
মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে কতো রকমের কাজই না করে । বড়শিতে নির্ভর করেই চলছে তালতলী উপজেলার নিউপাড়া এলাকার তিন বোনের জীবন সংসার। ছোট নদ-নদী কিংবা খালে নৌকায় বসে বরশির ছিপ ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে মাছ ধরেন তারা। সে সব মাছ বিক্রি করেই চলে তাদের জীবিকা। তবে নদ-নদীর নাব্যতা সঙ্কটে দিনদিন মাছ কমে যাওয়ায় কোনো মতে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে এই তিন বোনের। তবে আজও পর্যন্ত সরকারী কোনো সহযোগিতা পায়নি তারা। এলাকার মেম্বর-চেয়ারম্যানও কোনো সহযোগিতা দেয়নি। তিন বোনের সাথে কথা হলে তারা বলেন স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীতে মাছ থাকলে তাদের সংসারের সকল সদস্যর পেটে ভাত জোটে। মাছ না থাকলে ভাতও জোটে না। তবুও জীবন সংসার চালাতে বাবার বড়শির ছিপ ৩০ বছর যাবৎ ধরে আছি। আর বসবাস করার ঘরগুলো তেমন ভালো না। এই তিন বোনের বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের বিষয়ে স্থানীরা বলছে তাদের জীবন খুব কষ্টে কাটে তাই তারা এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন। তারা তিন আপন বোন প্রায় ৩০ বছরের উপরে এই স্লুাইস গেটে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে কোনো মতে সংসার চলছে।
শুক্রবার(১২ নভেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে তালতলী উপজেলার নিউপাড়া এলাকার স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীতে তিন বোন সারিবদ্ধভাবে ডিঙি নৌকায় বড়শির ছিপ ফেলে মাছের আশায় বসে আছেন। কারো বড়শিতে টেংরা, চিংড়ি,পুটি ও বোয়াল আবার কারো বড়শিতে ধরা পড়েকোড়াল, পাঙাশ, রুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এসব মাছ বাজারে নিয়ে বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৫০০ কেজি দরে। এভাবেই দৈনিক এক এক বোনের ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা রোজগার হয়। তবে কেনো কোনো দিন খালি হাতেও ফিরতে হয় তাদের। যে দিন খালি হাতে ফেরা হয় সেদিন পেটে ভাত জুটে না এই তিন বোনের সংসারের কোনো সদস্যর। এভাবে জীবন চলছে তাদের।
উপজেলার কড়ইবাড়িয়া নিউপাড়া একই এলাকায় রাহিমা বেগমের সাথে বাদশা হাওলাদারের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পরেই সংসারের হাল ধরেন রাহিমা বেগম। বছর দশেক যাওয়ার পরে স্বামী অসুস্থ হয়ে কর্মহীন হয়। পরে রাহিমা বেগম ৫ জনের সংসার এই বড়শির ছিপ ফেলে মাছ ধরে চলায়। একই এলাকার সুলতান হাওলাদারের সাথে ফাতেমা বেগমের বিয়ে হয়। তবে তার স্বামীও অসুস্থ হলে তিনিও বড় বোন রাহিমার পেশাকেই বেছে নেয়। ছোট বোন জরিনা বেগমের বিয়ে হয় বাড়ির পাশে খালেক মোল্লার সাথে তিনি মোটামুটি সুস্থ থাকলেও সংসারের অভাবে মানুষের বাড়ি কাজ করেন।
এবিষয়ে বড় বোন রাহিমা বেগম বলেন, বাবা সেই ছোট বেলা গরিব ঘরে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে যে সুখ আছে তা কখনো চোখে দেখিনি। তাই সংসার চালাতে ধরতে হয়ে বড়শির ছিপ। আমার বাবার পেশাও ছিলো বড়শি ছিপ ফেলে মাছ ধরে আমাদের সংসার চালাইছে। এভাবেই কেটে গেছে ৩০টি বছর।
মেজো বোন ফাতিমা বেগম বলেন, বিয়ের দিন থেইে স্বামীর ঘরে অভাবঅনাটন দেখে দেখে সংসার চলছে। জীনব সংগ্রাম কম করিনি স্বামীর সংসারে একটু সুখ দেখার জন্য। এই বড়শির ছিপে পেটে ভাত জুটে এখন। স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীতে মাছ না থাকলে আমার পরিবারের ৩ জন মানুষের ভাত জোটে না। তাই সংসার চালাতে ৩০টি বছর এই স্লুইসগেট নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছি। তবে সরকারী কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা আজও পাইনি।
ছোট বোন জড়িনা বেগম বলেন, আজকের দিনে কোনো মাছ পাইনি তার কারন হচ্ছে স্লুইসগেট দিয়ে পানি ওঠা নামা করে নাই। স্লুইজগেট বন্ধ করে রাথা হয়েছে। আজকের আমার সংসার চলবে না। এভাবেই অভাবঅনাটনের ভিতরেই আমাদের জীবন চলে যায়। তবুও সরকারী কোনো সহযোগিতা পাই না। যদিও কিছু দেওয়া নাম করে তবে বিনিময়ে টাকা দিতে হবে। টাকাও দিতে পারি না আর সরকারী সহযোগিতাও পাই না। আমাদের থাকার ঘরগুলোও তেমন ভালো না। তাই দনি রাত কষ্ট করেই যাচ্ছি। কবে যে কপালে সুখ হবে আল্লাহ্ ভালো যানে।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য জলিল রাঢ়ীর ফোনে একাধিকার ফোন দিলে মোইবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন বলেন,বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখে সরকারী সকল ধরনে সহযোগিতা করা হবে। আগামী সোমবারই আমার অফিসে তাদের তিন বোনকে ডাকা হবে।
তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দার বলেন,এই তিন বোনকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।