শীত মৌসুমে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও মনে করছেন, পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোম নিরাময়ে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোম শীর্ষক ওয়েবিনারে তারা এই মত জানান।
এতে অতিথি হিসেবে বেগম বদরুন্নেছা সরকারি গার্লস কলেজের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক ডালিয়া রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. হাবিবুর রহমান অংশ নেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক এই আয়োজন করে আসছে।
ওয়েবিনারে করোনা থেকে মুক্ত হওয়া অধ্যাপক ডালিয়া রহমান তার অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
তাপমাত্রা কমে যাওয়া আবার বেড়ে যাওয়া, ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুম না হওয়া, তীব্র অবসাদে ভোগা, দুর্বল লাগার কথা জানিয়ে বলেন, কথা বলতে ইচ্ছা করে না, আগ্রহও কমে যাচ্ছে।
তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে তার স্বাদ চলে যাওয়া বা ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যাবার মতো ঘটনা ঘটেনি। তার অক্সিজেন লেভেলও ভালো ছিল বলে জানান।
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে বুকে ব্যথা, বুক ধরফর করা, অবসাদগ্রস্ত হওয়ার সমস্যা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। কখনো কখনো হৃদস্পন্দন কমে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। শুরুতেই যেটা করা দরকার, যেহেতু অধিকাংশ বাড়িতে এখন পালস-অক্সিমিটার আছে— বিশ্রাম নেওয়ার সময় ও শারীরিক পরিশ্রম করার সময় অক্সিজেন লেভেলটা দেখে নেওয়া যেতে পারে। যদি পরিশ্রম করার পরে অক্সিজেন লেভেল কমে যায়-ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকের হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সে ক্ষেত্রে হার্ট স্পেশালিস্টের কাছে যেতে হবে। যদি এই দুই ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা না থাকে তাহলে নিউট্রিশন, ফিজিক্যাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট দেখাতে হবে। বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতার সঙ্গে মানসিক বিষয়ের যোগাযোগ থাকায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, আগে কোভিড নেগেটিভ হবার পর স্বস্তি পেলেও এখন দেখা যাচ্ছে তার পরেও কিছু সমস্যা চলছে।
আর নতুন যোগ হওয়া কোভিড ফগে উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতার পাশাপাশি স্মৃতি বিভ্রাট হচ্ছে। তাই বিষণ্নতা-অবসাদ দূর করতে ওষুধ যেমন প্রয়োজন, তেমনি সেই সঙ্গে দরকার অ্যাকটিভিটি।
তিনি বলেন, করোনার অটিজম, চাইল্ড মেন্টাল হেলথ নিয়ে কাজ হলেও এ বিভাগে জনবল কম। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু কিছু জায়গায় পোস্ট কোভিড ক্লিনিক হয়েছে। মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের মাধ্যমে রোগীদের কোপিং মেকানিজম সর্ম্পকে ধারণা দিচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, কাউন্সেলিং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভালো কাজ করে।
তবে দেশে জেলা সদর হাসপাতালগুলো সাইকিয়াট্রিস্ট পোস্ট নেই জানিয়ে অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, যেহেতু কোভিড প্যানডামিকের সঙ্গে মেন্টাল হেলথ প্যানডামিকের বিষয়টি চলে আসছে, তাই জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে একজন করে সাইকিয়াট্রিস্ট রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সাইকোলজিস্টের পদ তৈরি করতে হবে এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রাখা যেতে পারে।