জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের আট মাস পরও সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত ফাইল চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ এর কার্যক্রম। এতে প্রকল্পটির কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকের সভায় সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই প্রকল্পে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৩৯টি উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ও আবাসস্থল, রোগ-বালাই ও সংরক্ষিত এলাকার বৈশিষ্ট্য ও প্রতিবেশ নিয়ে জরিপ করা হবে। সুন্দরবনের নদী, খাল, পুকুর ইত্যাদি খনন-পুনঃখননের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। বনের সম্পদ আহরণকারী ও সুবিধাভোগীদের জন্য প্রচলিত পারমিট সিস্টেম ও পরিচয়পত্র অটোমেশন করা হবে। ইকোট্যুরিজম পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ট্যুর গাইডদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম কাজ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজগুলো এখনো শুরুই করা যায়নি। তবে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে নাম পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরই প্রকল্পটির কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু হবে।
এদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীর গতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বাগেরহাট জেলা শাখার আহ্বায়ক নুর আলম বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় অঞ্চলকে সুন্দরবন যেভাবে নিরাপদ রাখে, সে বনের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সব সময়ই উদাসীনতা দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নয়, এটা বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। তাই সুন্দরবন সুরক্ষা বিষয়ক কোনো প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার কোনো সুযোগ নাই। বন বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও রামপাল মোংলার সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই প্রকল্পের কাজও শুরু হবে।