বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু করার জন্য সব থেকে বেশি অবদান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেখেছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেণু’র জীবন ও কর্মভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘বঙ্গবন্ধুর রেণু’-এর লোগো ও ওয়েবসাইট উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, হাসুমণি’র পাঠশালা নিবেদিত ও মারুফা আক্তার পপি’র পরিচালনায় নির্মিত হচ্ছে এ চলচ্চিত্র। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেণু’র জীবন ও কর্মভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘বঙ্গবন্ধুর রেণু’-এর লোগো তৈরি করেছেন সনজীব দাস অপু ও ওয়েবসাইট নির্মাণ করেছেন দেবাশীষ বিশ্বাস পাভেল।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু করার জন্যে যিনি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তিনি বঙ্গমাতা। বঙ্গবন্ধু ৩ হাজার ৫৩ দিন কারাগারে ছিলেন। এটা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলে বঙ্গবন্ধুর থাকার সময়। এছাড়াও যদি আর কোনো তথ্য থাকে সে তথ্যগুলো যুক্ত করব আমরা। সব মিলিয়ে পুলিশের কাছে থাকা তথ্য দিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করব।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখনই কারাগারে যেতেন তখন বঙ্গমাতা একটা নোটবই, খাতা-কলম ওনাকে দিতেন। এজন্যই আমরা পেয়েছি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ বিভিন্ন বই।
নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতা আমাদের বললেন, তোমরা আরও আন্দোলন তীব্র করো। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে দ্রুত মুক্তি দেবে। তার দূরদর্শী চিন্তা এমনই ছিল। আমাদের ছাত্রনেতারা মাঝেমধ্যেই বঙ্গমাতার কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে যেতাম। ৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধু যখন শুরু করলেন অনেকে স্লিপ দিয়েছিল তিনি সেগুলো চশমার নিচে রাখলেন। তারপর তিনি ভাষণ শুরু করলেন নিজের মতো করে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন সারাবিশ্বের সম্পদ। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে এটাই বলেছিলেন ভাষণটি নিজের হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলে যেটা আসে সেটা দিতে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজা রামমোহন রায়ের সময় বাংলায় রেনেসাঁ হয়। কিন্তু এদিকে (পূর্ব বাংলা) রেনেসাঁ এসেছে একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। বেগম রোকেয়ার পেছনে যেমন ছিলেন তার স্বামী তেমন বঙ্গবন্ধুর পেছনে সর্বদা সহযোগিতা নিয়ে ছিলেন বঙ্গমাতা। ৭ মার্চের বক্তব্যের আগে যখন বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতাকে জিজ্ঞেস করেন এতো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে কী বলব, তখন বঙ্গমাতা বললেন তুমি এতোদিন যা বিশ্বাস করে এসেছো সেটা বলো। বঙ্গমাতার ছিল এতো আত্মমর্যাদা, সেটা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার ছবিটা গভীরে দেখলে বোঝা যায়।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সব অনুপ্রেরণার উৎস। কিন্তু নিজে পর্দার অন্তরালে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন দলের নেতাকর্মীদের আর্থিক সহায়তা করেছেন, যখন তিনি নিজেও আর্থিক সংকটে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আগরতলা মামলায় যখন কারাগারে তখন তাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে পাকিস্তানে আলোচনায় যাওয়ার সুযোগ আসে, সেসময় আওয়ামী লীগের নেতারাও বললেন পাকিস্তানে যেতে। কিন্তু বেগম মুজিব বললেন বঙ্গবন্ধু যাবেন না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সহমরণেও গিয়ে তিনি চির ঋণী করে গিয়েছেন আমাদের। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন তখন কিছু লেখার জন্যে বারবার তাগাদা দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচাসহ তিনটি বই লেখার পেছনেও অবদান বঙ্গমাতার। নতুন প্রজন্মের যারা তাকে দেখেননি তাদের জন্যে এ চলচ্চিত্রের প্রয়োজন আছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও হাসুমণি’র পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোর্শেদুল ইসলাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম।