বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার। প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পের মাত্রার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা ৪৬ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ইএমএসসি জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি ভারতের মেঘালয়, বাংলাদেশ, আসামে অনুভূত হয়েছে।
এদিকে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল আসামের গোয়ালপাড়ায়।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত (১৭ সেপ্টেম্বর) ১০টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে দেশে। এতে জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বছরের শুরুতে ভূমিকম্পের ভয়াবহ তাণ্ডবের শিকার হয় তুরস্ক-সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সেখানে মারা যান প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। লাখ লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরবর্তীতে বেশ কয়েক দফা সেখানে ভূকম্পন অনুভূত হয়।
বাংলাদেশে এ বছর প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পাশাপাশি কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলাও। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে জানমালের তেমন ক্ষতি হয়নি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক জানান, রাখাইন রাজ্যের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।
চট্টগ্রামে গত ৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। চট্টগ্রাম আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অক্ষাংশ ২২ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমা ৯৪ দশমিক ১৯ ডিগ্রি পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে। রাজধানীর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এর দূরত্ব ছিল ৪০০ কিলোমিটার।
গত ৫ মে রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, শুক্রবার সকাল ৫টা ৫৭ মিনিট ৮ সেকেন্ডে রাজধানীতে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে দোহারে। তবে, এ ঘটনায় জানমালের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
গত ৫ জুন ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্ট জানায়, এদিন সকালে বঙ্গোপসাগরে ৩.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের কাছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে। বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ৮টার দিকে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
গত ১৬ জুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। ঢাকা ছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ থেকে ভূকম্পনের তথ্য আসে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। অবশ্য ভূমিকম্পের পরপরই বিভিন্ন মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যায় সেখানে বলা হয়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভারতের শিলংয়ে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫। তবে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, ১০টা ৪৬ মিনিট রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
গত ১৪ আগস্ট সিলেটে ফের ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায়ও এটি অনুভূত হয়। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ও সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, এর উৎপত্তিস্থল ছিল আসামের মেঘালয়। উৎপত্তিস্থলে এর গভীরতা ছিল ৩৫ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২২৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে।
ঠিক ১৬ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৯ আগস্ট সিলেট মহানগরীর আশপাশে ফের মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তাপুরে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৪ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প আঘাত হানে। আসামে আঘাত হানা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সিলেট জেলাও। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার গভীরে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। বাংলাদেশের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, সিলেটে ৪ দশমিক ৪ মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২৬৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের আসামের কাছাড়ে।
সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল সদরে। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫ কিলোমিটার নিচে।