সামাজিক বিয়ের আগেই ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন বলে করোনা মহামারির সময় থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বলিউড-টলিউডের অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে দীর্ঘকালীন প্রেমিক কুণাল বর্মার সঙ্গে আইনি বিয়ে করেছিলেন পূজা। সেই আইনি বিয়ের ৬ মাস পরেই ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
অবশেষে পূজা ও কুণাল ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর বিবাহের প্রচলিত রীতিনীতি মেনে গাঁটছড়া বাঁধেন। বিয়ের সময় পূজার ছেলের বয়স এক বছর ছিল। তা নিয়েও কটাক্ষের শিকার হতে হয় পূজাকে। ছেলের সামনে বিয়ে করছেন বলে তার চরিত্র বিশ্লেষণ করতেও পিছপা হননি অনেকে।
পূজা বরাবর স্পষ্টবক্তা। নিজের মতামত, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেন না কখনোই। এক টক-শোয়ে এসে তার প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেন পূজা।
তিনি জানান, কুণালকে বিয়ে করার আগে দু’জনের ৯ বছরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু অভিনেত্রীর জীবনে প্রথম প্রেম কুণাল নন। সে কথা জানান পূজা নিজেই। প্রথম প্রেমিকের সঙ্গে সারা জীবন কাটাবেন বলে ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
জীবনের প্রথম প্রেম। ভালবাসার সাগরে যেন ডুবে ছিলেন পূজা। প্রেমিককে জীবনের ধ্যান-জ্ঞান হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন তিনি। তাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পূজা। দু’জনে কলকাতা থেকে পালিয়ে মুম্বাই চলে যান।
কিন্তু মুম্বাই পৌঁছনোর পর পূজা ও তার প্রেমিকের মধ্যে প্রায়শই মতবিরোধ, অশান্তি হতো বলে দাবি অভিনেত্রীর। ধীরে ধীরে একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেন তারা।
পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের ফেলে যে মানুষটির সঙ্গে জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই মানুষটিই তার কাছে অচেনা হয়ে ওঠেন। সম্পর্ক বাঁচানোর হাজারো চেষ্টা করলেও দু’জনেই ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পূজা।
পূজা জানান, বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে বাবা-মাকে খুব কষ্ট দিয়েছিলেন তিনি। বাড়ি ফিরে যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না। মুম্বাইয়ে ওই অচেনা পরিবেশে একা থাকতে শুরু করেন তিনি।
২০০৭ সালে অর্ণয় চক্রবর্তীকে বিয়ে করেছিলেন পূজা। ৬ বছর একসঙ্গে ঘর করার পর ২০১৩ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়।
কিন্তু মুম্বাইয়ে থাকাকালীন পূজা তার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেন। অভিনেত্রী হিসাবে সফল হয়ে বাবা-মায়ের গর্বের কারণ হয়ে দাঁড়াবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
পূজা জানিয়েছিলেন, ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান’ ছবিতে মণীষা কৈরালার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তথ্যচিত্র ঘরানার এই ছবিটি যিনি পরিচালনা করেছিলেন, তিনি পূজার বাবার বন্ধু। পরিচালক নিজেই পূজাকে এই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব জানান।
এরপর হিন্দি ধারাবাহিকে কাজ করতে শুরু করেন পূজা। ২০১১ সালে ‘দেবো কে দেব মহাদেব’ ধারাবাহিকে পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথমে তাকে সতী চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। পরে, মৌনী রায় এই চরিত্রে অভিনয় করেন।
তেলুগু ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল পূজাকে। ২০১১ সালে ‘বীরু থেড়া’ ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। একই বছর হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেন পূজা।
তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি পূজাকে। একের পর এক বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন তিনি। বাংলা ছবির পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও কাজ করেছেন পূজা।
‘ঝলক দিখলা যা’, ‘কমেডি নাইটস বাঁচাও’ রিয়্যালিটি শোয়ে কাজ করেছিলেন পূজা। ২০১৬ সালে ‘কুবুল হ্যায়’, ‘রাজিয়া সুলতান’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি। ২০১৬ সালে ‘বিগ বস বাংলা’য় প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন পূজা। বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের মুখ হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া নামী পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য ফটোশুটও করেছেন পূজা।
২০০৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘তুঝ সঙ্গ প্রীত লগাই সজনা’ ধারাবাহিকটি। এই ধারাবাহিকে পূজার সহঅভিনেতা ছিলেন কুণাল। শুটিং সেটেই দু’জনের পরিচয়। সেই আলাপ গড়ায় প্রেমে। ৯ বছর সম্পর্কে থাকার পর গাঁটছড়া বাঁধেন পূজা ও কুণাল।
২০২০ সালে বিয়ে করার পর অভিনয় জগৎ থেকে সাময়িক বিরতি নেন পূজা। দু’বছর পর ফিরে এসে হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে নামেন তিনি। ‘অনুপমা: নমস্তে আমেরিকা’ ধারাবাহিকে কাজ করেছেন তিনি।
ইনস্টাগ্রামে বেশ সক্রিয় পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার অনুরাগীর সংখ্যাও খুব একটা কম নয়। এখন পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীর সংখ্যা পেরিয়েছে ২২ লাখের গণ্ডি।
সূত্র : আনন্দবাজার