২০২৩ সালের বিশ্ব ইজতেমার দিন-তারিখ ঠিক করা হয়েছে। প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১৩-১৫ জানুয়ারি। এতে মাওলানা জোবায়ের পক্ষের লোকজন অংশ নেবেন। আর দ্বিতীয় পর্ব ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ওই পর্বে মাওলানা ওয়াসেক-এর অনুসারীরা অংশ নেবেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ ও আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টঙ্গীর ঐতিহাসিক বিশ্ব ইজতেমা গত দুই বছর করোনার কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ২০২৩ সালে বিশ্ব ইজতেমা যেন সংক্ষিপ্ত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা যায় সেই ব্যবস্থা করতে। তবে এই ইজতেমা করার ক্ষেত্রে তাবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে একটু মতবিরোধ আছে। মতবিরোধ নিরসনে গতবার আমরা দুই ভাগে ইজতেমা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম, তারা সেটা করেছে। এবারও ঠিক সেভাবেই করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এক দলের নেতা হলেন মাওলানা যুবায়ের আহমদ এবং অন্যদলের নেতা হলেন ওয়াসিফুল ইসলাম। দুজনই আগে একসঙ্গে তাবলিগ করতেন। এখন তারা দুইজন দুই প্রান্তে চলে গেছেন। তাদের সবাইকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তারা এসেছেন। তারা যেন বিশ্ব ইজতেমা সুন্দরভাবে সুসম্পন্ন করেন, এরকম একটা অনুরোধ রেখেছিলাম। পাশাপাশি আরো একটি অনুরোধ করেছি, যে দুজন একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত দেন, কে আগে করবেন কে পরে করবেন কিংবা একসঙ্গে করতে পারবেন কি না।
তারা একসঙ্গে করতে একমত হতে পারেননি। কে আগে করবেন, কে পরে করবেন সে বিষয়েও একমত হতে পারেননি। আমাদের ওপর সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছিলেন। আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি। আমরা কোনো কিছু পরিবর্তন করব না। গতবার যেভাবে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ বছরও সেভাবে অনুষ্ঠিত হবে, বলেন মন্ত্রী।
এ বিষয়টি তারা উভয়ে মেনে নিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। দুইবারে আয়োজন করা হবে। প্রথম পক্ষ যুবায়ের গ্রুপ আগামী ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন করবেন। প্রথম পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন শেষে ইজতেমার মাঠ প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেবে। প্রশাসন মানে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় মেয়রকে মাঠ সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবে। এরপর দ্বিতীয় গ্রুপ মাঠ ইজতেমার উপযোগী করে ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন করবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি টঙ্গীতে যে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে সারা বিশ্বের মানুষ তাকিয়ে থাকত, সে ইজতেমা আবারো শুরু হবে। যেসব বিদেশি এখানে আসবে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসতে হবে। আর ছোট বা সীমিত পরিসরে করার জন্য তাদেরকে বলা হয়েছে। তারা সেটিই করবে।
ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশাল ময়দানে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ১৯৬৭ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তখন জেলাভিত্তিক অংশগ্রহণ ছিল। কিছু জেলা প্রথম পর্বে আর কিছু জেলার মানুষ দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতেন।
তবে ২০১৮ সালে ভারতের প্রখ্যাত মাওলানা ও তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দুই গ্রুপ দুই পর্বে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।