চলতি মাস থেকে নাগরিকদের ভ্যাকসিন পাসপোর্ট সঙ্গে রাখা ও প্রদর্শন বাধ্যতামূলক বলে যে ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য, তা থেকে সরে এসেছে দেশটির সরকার। রোববার এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।
নাগরিকদের ভ্যাকসিন পাসপোর্ট রাখা ও প্রদর্শন করার চেয়ে করোনা টেস্ট ও টিকাদান কর্মসূচির আওতা ও গতি বাড়ানোকেই সরকার অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘সামনেই শরৎ এবং শীতের মৌসুম আসছে। এসময় সংক্রমণে উল্লফন দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং তা রোধ করতে করোনা টেস্ট ও টিকাদান কর্মসূচির সম্প্রসারণ ও গতি বাড়ানোর দিকেই আমরা মনোযোগ দিচ্ছি।’
‘এবং আরও একটি কথা আমি বলতে চাই- আপাতত যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন।’
টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করার পর যে সনদ দেওয়া হয়, তাকেই ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বলা হয় ইউরোপে। গত ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের টিকা বিষয়ক মন্ত্রী নাদিম জাহউই জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড রাজ্যে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হবে, তারপর পর্যায়ক্রমে তা অপর দুই রাজ্য স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডেও এই নির্দেশ কার্যকর করা হবে।
কিন্তু রোববার সাজিদ জাভিদের বক্তব্যে এটি স্পষ্ট হলো যে, এ বিষয়ে পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছে যুক্তরাজ্যের সরকার। এই পরিবর্তনের কারণ প্রসঙ্গে দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক ঘোষণাকে স্বাগত জানাননি যুক্তরাজ্যের উল্লেরযোগ্য সংখ্যক নাগরিক।
তার ওপর, সম্প্রতি চিকিৎসাসহ বিভিন্ন খাতে করের পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার, যা নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করতে পারে। সেই ক্ষোভ প্রশমন করতেই পূর্বের অবস্থান পরিবর্তন করেছে সরকার।
রোববারের সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভিদ আরও বলেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি যেমনই হোক, ভবিষ্যতে ফের লকডাউন জারির কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
এ সম্পর্কে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরে চলা পরপর কয়েকটি দীর্ঘ লকডাউনে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে আমাদের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ উপস্থিত, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়।’
‘সামনে শীতকাল আসছে, এবং আমরা জানি- গত বছরের মতো এ বছরের শীতকালেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে; কিন্তু তারপরও, সরকার আর লকডাউন জারির পক্ষপাতী নয়। তার পরিবর্তে করোনা টেস্টের আওতা এবং টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়ানোর দিকেই আমরা বেশি মনযোগ দিচ্ছি।’
গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা মহামারিতে বিশ্বের যে দেশগুলোতে করোনায় সংক্রমণ-মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ঘটেছে- সেসবের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাজ্য। মহামারির শুরুর পর থেকে বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সেরে ওঠাদের হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবাসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার্স জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭২ লাখ ২৬ হাজার ২৭৬ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ২০০ জনের।
সূত্র : রয়টার্স