ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক ঐক্য ।
সোমবার বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধীজীবী চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মূলত একটি স্বৈরতান্ত্রিক আইন। এই আইন সৃষ্টির মূল লক্ষ্যই হলো সরকারের গদি রক্ষা করা। একজন গণতান্ত্রিক সরকারকে যেমন প্রতিদিন একটু একটু করে গণতান্ত্রিক হতে হয়। তেমনি একজন অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী, ফ্যাসীবাদি সরকারকে তার গদি টিকিয়ে রাখতে প্রতিদিন একটু একটু করে ফ্যাসীবাদি হয়ে উঠতে হয়। তাই বর্তমান সরকার এই ধরনের আইন তৈরী করেছে।
তিনি আরও বলেন, যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনানুযায়ী লেখক মোস্তাক এবং কার্টুনিস্ট কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই আইনের ধারা ও উপধারানুযায়ী প্রতিদিন ৪-৫ লাখ মানুষকে গ্রেপ্তার করতে হবে। যেখানে সরকার জনগণের কথা ভাববে, সেখানে আইন নামক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করছে সরকার। আমরা জানি প্রতিবাদের ফলাফল অচিরে আসবেনা। তারপরও প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ, প্রতিবাদ করা ছাড়া এদেশে মানুষিকভাবে সুস্থ থাকাও সম্ভব না।
মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর হোসেন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংবিধান ও স্বাধীনতা পরিপন্থী আইন। এমন পরিপন্থী আইন সৃষ্টিকারী কখনই সুস্থ মস্তিষ্কের হতে পারেনা। আর অসুস্থ মস্তিষ্কের দ্বারা সৃষ্ট আইন কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এমন নিবর্তনমুলক আইনের সমালোচনা আন্তার্জাতিক পর্যায় থেকেও এসেছে। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা নামক কালো আইনকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য আন্তার্জাতিক পর্যায় থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন পরিবর্তন আসেনি। । ২০২০ সালে এ আইনে ১৯৮ টি মামলা হয় এবং ৪৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব কথা শেষে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি বাক প্রতিবন্ধী আইন।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, ফ্যাসীবাদি সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে যে আইন করেছে সেটি মূলত সংবিধান ও চেতনা বিরোধী আইন। এই কালো আইন মানুষের বাক স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছে। আজ ৫০ বছরে এসেও বাংলাদেশ সৃষ্টির সেই মুল মন্ত্রের বিরুদ্ধে সরকার এই কালো আইন সৃষ্টি করেছে।
আমরা চাই দ্রুত এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হোক।
এসময় অংশগ্রহণকারীদের হাতে ‘লেখক মোস্তাক মরলো কেন?’, ‘লেখক মোস্তাক হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই’, ‘মত প্রকাশের অধিকার চাই’, ‘লেখক হত্যাকরী রাষ্ট্র’, ‘কথা বলার অধিকার চাই’, এসব লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আবদুল মজিদ অন্তরের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান, রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ-দৌলা,গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলার সমন্বয়ক মুরাদ মোর্শেদ, আ্যাডভোকেট হাসিব, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রফ্রন্ট রাবি শাখার আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার প্রমুখ।