শিশুটির নাম আলী হোসেন মোহাম্মাদ। বয়স হবে আনুমানিক ১৩। চোখে-মুখে বিষণ্ন ছাপ। চালাচ্ছে রিকশা। সাধারণ আর দশটা কিশোরের মতো তার জীবন চলে না। এই ১৩ বছর বয়সেই স্কুলে যাওয়ার বদলে কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের ভার। বাবা মারা গেছে জন্মের আগেই। অসুস্থ হতদরিদ্র মায়ের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে ছোট্ট কাঁধে।
সারা দিন রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় হয়, তাই দিয়ে মাকে নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছে আলী হোসেন। তার যে বয়স এতে আলী হোসেনের পড়ালেখা, খেলাধুলা কিংবা ছোটাছুটি করার কথা। কিন্তু সে বয়সেই উপার্জনের আশায় চালাচ্ছে রিকশা।
গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে আলী হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়। তখন জানা যায় সে যে রিকশাটা চালিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখছে সেই ব্যাটারিচালিত রিকশাটা পুরোনো হয়ে গেছে। চার্জ ঠিকমতো থাকে না। নতুন গাড়ি কিনতে হবে। তাহলে আয় একটু বাড়ত। এত পরিশ্রমের পরও অসুস্থ মাকে রান্নার কাজে সহযোগিতা করতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই তালতলী বাজারে বয়স্ক রিকশা-ভ্যানচালকদের সঙ্গে এই শিশু রিকশাচালককে দেখা যায়। ছোট মানুষটি পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে এই বয়সে কঠিন কাজ করছে বিধায় সকলে তাঁকে স্নেহ করে। শিশু আলী হোসেন অনেক শান্ত ও ভালো মনের মানুষ। এ জন্যই শিশু আলী হোসেন সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে।
শিশু আলী হোসেন বলে, ‘দুমুঠো ভাতের জন্য দিন–রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বাবা আমার জন্মের আগেই মারা গেছেন। মা আছে সেও অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। মায়ের ওষুধের টাকাও মাঝে মাঝে জোগাড় করতে পারি না। লেখাপড়া করতে পারিনি। সারা দিন রিকশা চালিয়ে দেড়–দুই শ টাকা হলে বাড়িতে ফিরে যাই। যদি কোনো দিন সুযোগ পাই তাহলে লেখাপড়া করব।’
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হোসেন বলেন, ‘আলী হোসেনের পাশে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’