২০২২ সালে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারত
logo
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০২২ সালে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারত

মাহমুদুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার
জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ ১২:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে ভারত। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা স্বিকার করে, তারা ভারতকেও স্বিকার করে। কারন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। সেই থেকে শুরু করে দুই দেশের বন্ধুত্বের পথচলা। দিনে দিনে দ্বিপাক্ষিক এ সম্পর্কের পরিধি বেড়েছে ব্যাপক। দুই দেশের সম্পর্কের ডানা বিস্তৃত হয়েছে নানা আঙ্গিকে। চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে শুরু করে ভারতের পর্যটন এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দিন দিন প্রসারিত হয়েছে।

দুই দেশের বন্ধুত্বের এ সুফল নাগরিকরাও ভোগ করছে সমানতালে। ফলে সদ্য সমাপ্ত ২০২২ সালে চিকিৎসা, ভ্রমণ, শিক্ষাসহ নানা প্রয়োজনে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারত। এসব ভিসা পেতে শুধু প্রসেসিং ফি ছাড়া আর কোনো খরচ করতে হয়নি বাংলাদেশিদের। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির এই সেবা দিতে বাংলাদেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভিসা সেন্টার স্থাপন করেছে ভারত।

বরগুনা সদরের শহীদ স্মৃতি সড়কের বাসিন্দা শংকর দাস বলেন, এ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্ট সমস্যায় দীর্ঘ
দিন বরগুনার বেশ কয়েকজন চিকিৎস্যকের পরামর্শ ও চিকিৎস্যা নিয়ে আমি সুস্থ্য হইনি। কিন্তু শেষে গত বছরের অক্টোবরে আমি চিকিৎস্যার জন্য ভারতে চলে যাই। সেখানে খুব অল্প খরচে চিকিৎস্যা নিয়ে আমি এখন সুস্থ্য।

সদরের বাশবুনিয়া এলাকার আব্দুল হান্নান নামে একজন বলেন, আমার ভাগ্নি শান্তা কয়েকবছর ধরে পেটে ব্যাথায় ভুগছিলো। আমরা গুরুত্ব দেইনি প্রথম। কিন্তু পরে যখন শান্তা বড় হচ্ছিল, তখন আমরা গুরুত্ব দেই। কারন ও ব্যাথায় ব্যাপক কষ্ট পেত। প্রথমে বরগুনা ও পরে বরিশাল চিকিৎস্যকের সেবা নিয়েও ও সুস্থ্য হয়নি। ছোটে একটি বিষয় পেটে ব্যাথা। কিন্তু বরিশালের চিকিৎস্যকরাও যখন রোগ নির্নয় করতে পারেনি, তখন আমরা প্রতিবেশিদের পরামর্শে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভাগ্নিকে ভারতের ভেলোরে নিয়ে যাই। এরপর সেখানে প্রায় একমাস ছিলাম আমরা। এরপর থেকে আমার ভাগ্নি সুস্থ্য। সামনের মাসে আবারও চেকআপের জন্য সেখানেই যাব।

বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) রয়েছে ১৫টি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র।

বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বিশ্বের বৃহত্তম ভিসা অপারেশন নেটওয়ার্ক ভারতের। দেশটি সবচেয়ে বেশি ভিসা বাংলাদেশি নাগরিকদের দিচ্ছে বলে দাবি ভারতীয় হাইকমিশন সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশি নাগরিকরা স্থল, নৌ কিংবা আকাশপথে ভারতে গিয়ে থাকেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে ভিসা প্রদানে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ধীরে ধীরে এসব শর্ত শিথিল করছে ভারত। করোনার আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের ১৬ লাখেরও বেশি ভিসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী লকডাউনেও জরুরি পরিস্থিতিতে ভিসা প্রদান বন্ধ করেনি ভারত। ওই বছর প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে এক লাখ ৯৬ হাজার মেডিকেল ভিসা।

তবে ২০২২ সালে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি ভিসা দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালের মার্চের শেষ দিক থেকে স্থলবন্দর ব্যবহারে কোভিডকালীন বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এ কারণে ভিসার আবেদন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশে ১৫টি আবেদন কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ১১ লাখ ভিসা ইস্যু করে ভারত। বছর শেষে এ সংখ্যা প্রায় ১২ লাখের কাছাকাছি পৌঁছায়। এদের প্রায় তিন লাখ মেডিকেল ভিসা।

ভারতীয় ভিসা আবেদনের জন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভিসা সেন্টার রয়েছে রাজধানী ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে। ঢাকাস্থ ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের ডেপুটি চিফ অপারেটিং অফিসার কিংশুক মিত্র বলেন, ভিসাপ্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করেন। যথাযথ ডকুমেন্টস দেওয়া হলে নিশ্চিতভাবে ভিসা দেওয়া হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিসাপ্রার্থীরা মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারস্থ হন।

দেখা যায় মধ্যস্বত্বভোগীরা একই ডকুমেন্ট একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংযুক্ত করে দিচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য। সেজন্য যে কেউ অনলাইনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দিলে বিড়ম্বনা কিংবা হয়রানিমুক্তভাবে যথাসময়ে ভিসা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশিদের জন্য ভারত বিনামূল্যে এসব ভিসা দেয়। তবে ভিসা আবেদনে প্রসেসিং ফি হিসেবে ৮০০ টাকা নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।