ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার মধ্যরাত) থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পদ্মা-মেঘনা নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে দল বেধে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। তীরে নোঙর করে ফিশিংবোট, ট্রলার থেকে ইঞ্জিন, জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিরাপদ স্থানে রেখে দিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো জেলে এসব সরঞ্জাম নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় নদী থেকে মাছ আহরণ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেও মাত্র ২২ দিনের অভিযান থাকায় তারা এনজিওর কিস্তি দিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ।
মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পদ্মা-মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী এলাকা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটারের নিষেধাজ্ঞার সময়ে কোনো জেলে নদীতে নামতে পারবেন না। ৪৪ হাজার ৩৫ জন কার্ডধারী ও নিবন্ধিত জেলে রয়েছে।
চাঁদপুর সদরের তরপুরচন্ডী এলাকার বাসিন্দা নূরে আলম জানান, সরকার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এটা আমরা মেনে নিয়েছি। আমরা নদী থেকে জাল উঠিয়ে ফেলেছি। নিষেধাজ্ঞার সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অসাধু জেলে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় এসে মাছ ধরে থাকে। তাই এই অভিযান সফল করতে হলে দক্ষিণাঞ্চলের মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে। তারা নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরার কারণে ভরা মৌসুমে আমরা ইলিশ পাই না নদীতে। এজন্য উত্তরাঞ্চলে মাছ ধরা পড়ে কম। যার কারণে এনজিওর কিস্তি দিতে পারছি না। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে সরকার কিস্তি বন্ধ করে দিলে ভালো হতো। অনেক জেলে আছে কিস্তির টাকার তাগিদে নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়। তাই তারা হয়রানি হয়।
জেলে আমির হোসেন জানান, অভিযানে আমরা সর্বদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। কিস্তি আছে, ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করে, ৬-৭ জন নিয়ে সংসার চালাই। প্রচুর টাকা দেনা-পাওনায় আছি। ২২ দিন সরকার যদি বড় একটা অনুদান দেয় তাহলে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারব। আমরা গরিব মানুষ। মাছ ধরার ওপর নির্ভর করে থাকি।
জেলে খোকন বলেন, মা ইলিশের অভিযানের কারণে আমরা নদী থেকে ফিরে এসেছি। সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়েছি। তাই আমরা বাড়ি ফিরে এসেছি। সরকার আমাদের ১৫-২০ কেজি চাল দেয়। এই চাল দিয়ে আমাদের পেট ভরে না। আমাদের অনেক খরচ আছে। সরকার যদি আমাদের অন্য কিছু সাহায্য করতো তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো।
চাঁদপুর মাছ ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী বিল্লাল জানান, অভিযানের এই সময়ে আমরা নদীর মাছ বিক্রয় করব না। ২২ দিন পুকুরের মাছ বিক্রয় করব। জেলেদের ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করব।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, সারাদেশের ন্যায় এবারও মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরেও নদীতে ২২ দিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে জেলা টাস্কফোর্সের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নদীর প্রবেশ মুখে খালের মুখগুলো বন্ধ করা হয়েছে। জেলেদের নৌকার ইঞ্জিনগুলো খুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নদীতে জাল ও নৌকা শুন্য দেখতে চাই। আমরা চাই না কোনো জেলে এই শাস্তির আওতায় আসুক। অবৈধভাবে নদীতে মাছ ধরলে ১-২ বছরের জেল অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা, কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলেদের জন্য সরকার ভিজিএফ চাল বিতরণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এবার ৫ কেজি চাল বেশি দিয়েছে। অর্থাৎ জেলেরা আগে নিষেধাজ্ঞার সময়ে চাল পেত ২০ কেজি। এবার তারা চাল পাবে ২৫ কেজি। এটা তাদের জন্য খুশির সংবাদ। আমরা আশা করি তারা অভিযান চলাকালে নদীতে নামবে না।