শাবান মাসের একটি মর্যাদাপূর্ণ রাতের নাম শবে বরাত। হাদিসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ১৫ শাবানের রাত। ‘শবে বরাত’ ফারসি শব্দ। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী।
এই রাত নিঃসন্দেহে ফজিলতপূর্ণ। এ নিয়ে যেমন বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়, তেমনিভাবে এই রাতের ফজিলতও অনস্বীকার্য। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। সেই রাতে তিনি মুশরিক এবং অন্য ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে বাজজার: ৮০, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৬৪৬)
আরেক হাদিসে আলি ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রাত আসে, তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা এদিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিজিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো রোগমুক্তি চাও? আমি তাকে সুস্থতা দেব। কে আছো এই এই চাও?’ এভাবে ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৬২)
শবে বরাতে নবীজির আমল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন—‘একবার রাসুলুল্লাহ (স.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো- তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না- হে আল্লাহর রাসুল। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।
তখন নবী (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (স.) তখন ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩; তাবারানি: ১৯৪)
সুতরাং এ রাতে আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের গোনাহসমূহের ক্ষমা চেয়ে, তাওবা করে গোনাহ মুক্ত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। এ রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত, কাজা নামাজসমূহ আদায়সহ অন্যান্য জিকির-আজকার করা যেতে পারে। আল্লাহর বিশেষ এ নিয়ামত যেন আমাদের থেকে এমনি এমনি হাতছাড়া না হয়ে যায়।

 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
								                                                                                     
                                    
 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                 
                                 
                                 
                                