দেশের মানুষের মন থেকে ‘একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১আগস্ট) বিকেলে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান। রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান হয়।
বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা উলু ধ্বনি এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং তারেক রহমান হাত নেড়ে এই অভিবাদনের জবাব দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের কথা বার বার স্মরণ করতে চাই। এজন্য চাই যে, ১৯৭১ সাল আমাকে একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছিলো, ভূখণ্ড দিয়েছিলো, আমাকে একটা স্বাধীন সত্ত্বা দিয়েছিলো এবং সেজন্য আজকে আমার অস্তিত্ব আছে, আমি টিকে আছি। আমি স্মরণ করতে চাই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের শহীদদেরকে, কারণ তারা আমাদেরকে একটা গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই দুইটা জিনিসই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আজকে একটা প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা আছে একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার… এটার বিরুদ্ধে কিন্তু আমাদেরকে সমস্ত বাংলাদেশের নাগরিককে তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জুলাই-আগস্ট যেভাবে সত্য, ঠিক একইভাবে সত্য কিন্তু একাত্তরের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন কে? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একটা নতুন করে কথা উঠছে ষড়যন্ত্র চলছে যে আপনার বাংলাদেশে এখানে এক ধরনের উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই উগ্রবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। এই উগ্রবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। তাহলে আমাদের বাংলাদেশের যে আত্মা, সেই অস্তিত্ব আমাদের রক্ষা পাবে না… এই কথাটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে।
‘আমি কথাটা আজকে এজন্য আরো বেশি করে বলছি যে, এইখানে আপনাদের সকলকে বিভক্তি বিভাজনের রাজনীতি কেউ করবেন না…. অতীতে যা হয়েছে হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য, বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য, বাংলাদেশের সামনে নেওয়ার জন্য, বাংলাদেশ আরো আরো উন্নত করবার জন্য আমাদেরকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’ বলেন ফখরুল।
‘ব্যাংককে বাড়ি ভাড়ার ধুম, ওরা গাড়ি কিনছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর যারা আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের ভোট নিয়ে আমাদেরকে শাসন করেছেন তারা ১৫ বছর আমাদেরকে বন্ধু হিসেবে মনে করেননি। তারা মনে করেছেন প্রজা হিসেবে আমাদের উপর অত্যাচার করেছেন নির্যাতন করেছেন, আমাদের সমস্ত দেশের সম্পদ লুন্ঠন করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি কয়েকদিন আগে চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলাম।’
‘ব্যাংককে গিয়ে আমি আমার বন্ধুদের কাছে শুনলাম যে, ওখানে এখন ব্যাংককে সবচাইতে যেগুলো আপনার অভিজাত এলাকা সেই অভিজাত এলাকাগুলোতে বাড়ি ভাড়ার ধুম পড়ে গেছে। সেই বাড়িগুলো ভাড়া করছেন সমস্ত আওয়ামী লীগের বিতাড়িত নেতারা। তারা একটা যে গাড়ি কিনছেন সেই গাড়িগুলো কোনটাই আপনার দুই কোটি, তিন কোটি টাকার কমে নয়। এসব টাকা কোত্থেকে থেকে গেল? এই দেশের সম্পদকে তারা প্রচার করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সবাই জানেন এটা নতুন করে বলার কিছু বলতে চাই না। শুধু এইটুকু বলতে চাই যে, আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক যে কাঠামো সে কাঠামো ভেঙ্গে ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এদেশের সম্পদকে লুণঠন করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। প্রায় 88 লক্ষ কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে। আর আমাদের সম্পদ বলতে আর কিছু নেই সব পাচার হয়ে গেছে।’
একজন অর্থনীতিবিদের বরাত দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন যে দেখে শুনে তো মনে হচ্ছে যে এর পরে তোমরাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে জনগণ তোমাদের উপরে আস্থা রাখবে। তো তোমরা দেশ চালাবে কোত্থেকে? কারণ টাকা তো সব পাচার হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমাদের দেশের অর্থনীতির অবস্থা কী করুণ করেছে সেই জিনিসটাই শুধু আমি আপনাদেরকে বললাম।‘
অসাম্প্রদায়িক একটি ‘রেইনবো রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠাই বিএনপি তথা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লক্ষ্য উল্লেখ করে ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে’ গঠনে সকলকে ঐক্য হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘নির্বাচন বানচাল হতে দেয়া হবে না’
গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কোনো শক্তি, কোনো ষড়যন্ত্রকারী সেই দিল্লিতে হোক আর কলকাতায় হোক বা বাংলাদেশের মাটিতে হোক কোন ষড়যন্ত্রকারীকে আমরা সহ্য করব না। সঠিক সময়ে এই নির্বাচন হবে। জুলাই সনদের নামে নানা রকম চক্রান্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েকটি দল তাদেরকে আমরা হুশিয়ার উচ্চারণ করছি, জুলাই সনদ হবে সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে। আপনি নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র করার দেশকে ভিন্ন অবস্থানে নিয়ে যাবেন না।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘নতুন প্রেক্ষাপটে জনাব তারেক রহমানের ৩১ দফা যেটা দিয়েছেন আমি বলি, এটাই হচ্ছে আমাদের জাতীয় সনদ। এর ভিত্তিতে আগামী বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আমাদের যেগুলো অভাব অভিযোগ আছে আজকে রামু থেকে শুরু করে গঙ্গাচড়া পর্যন্ত কোন একটি ঘটনার বিচার হয় নাই আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায় দাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য রনেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তপন চন্দ্র মজুমদার, এসএন তরুণ দে, মিল্টন বৈদ্য, পূজা উদযাপন ফ্রন্টের জয়দেব জয়, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত চক্রবর্তী, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত দেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ইনকনের প্রভু বিমলা প্রসাদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল বারী ড্যানি, জন গোমেজমহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।