বরগুনার তালতলীতে তেতুলবাড়িয়া এলাকায় পায়রা নদীর বেড়িবাঁধে হঠাৎ ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে সামান্য কিছু অংশ বাকি আছে। সহায়-সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের খাওয়া-ঘুম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়ি বাঁধ সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান,বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুইটি স্থানে ২০০ মিটার ধসে গেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাঁধে ধস নামলেও এখন পর্যন্ত ওই অংশ মেরামতের কাজ শুরু হয়নি। ফলে গ্রামবাসী বড় ধরনের ভাঙনের আশঙ্কা করছে। পূণিমার জোয়ারারের প্রভাবে বাঁধটির চারভাগের তিনভাগই ভেঙে গেছে। এরপর নদীর উত্তাল ঢেউয়ে বাকি অংশটুকু একটু একটু করে ভাঙছে। তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বাঁধের দুইটি অংশ ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। ভাঙা স্থান দিয়ে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। উত্তাল ঢেউ সরু বাঁধটিকে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পানি এসে পড়ছে বাঁধের পাশে থাকা বাড়ি-ঘরগুলোতে। এদিকে জেলেদের মাছ ধরার নৌকাগুলো ঢেউয়ে দুলছে। বিশাল বিশাল ঢেউয়ের আঘাতের শব্দ যেন পুরো গ্রামবাসীকেই জানান দিচ্ছে, রক্ষা করতে না পারলে যেকোনো সময়ে গ্রাস করবে। বাঁধটির পুরো অংশ ভাঙলে উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া,জয়ালভাঙ্গা,অংকুজানপাড়া,সোবাহানপাড়াসহ কয়েকটি গ্রাম পায়রা নদীর পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে ফসলি জমি, প্রাণহানি ঘটতে পারে মানুষসহ সম্পদের। এছাড়াও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মাছের ঘের তলিয়ে যাবে। এমনকি পুরো ইউনিয়নও তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কেউ কেউ। এতে শত শত পরিবার বিপাকে পড়বে।
বুধবার(১৮মে)দুপুরে পায়রা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, তেতুলবাড়িয়া এলাকা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বে বাঁধের ভাঙন স্থান। বিশাল বাঁধটির দুইটি স্থানে প্রায় ২০০ মিটার ভেঙে জিও ব্যাগ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ভাঙন বাঁধের দক্ষিণ দিকে ঢুকছে। জিও ব্যাগসহ ভেঙে গিয়েছে বাঁধটি। পানির স্রোতে বাঁধ থেকে ধীরে ধীরে মাটি সরে যাচ্ছে। ভাঙন স্থানগুলো বিশাল আকার ধারণ করছে। পানির স্রোত ভাঙন অংশে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে বাঁধের কাছে গিয়ে লোকজন দাঁড়িয়ে অসহায়ের মতো দেখছেন ভাঙন। এলাকাবাসী বলছেন পায়রা নদীর ঢেউ এসে নড়বড়ে ভাঙা বাঁধটাকে আঘাত হানছে। এই বুঝি ভাঙলো বাঁধ, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন! সবার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ। বাঁধের কোল ঘেঁষেই নদীতে সব কিছু হারিয়ে বাসাবাঁধা কিছু মানুষ। তারা দাঁড়িয়ে রয়েছে আর দেখছে ঢেউয়ের আঘাতের শব্দ আর বাকি অংশ একটু একটু করে ভেঙে যাচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, গত দুই বছর আগে এই এলাকার কয়েকটি স্থান ধসে যায়। পাউবো থেকে শুধু বালুর বস্তা ও অস্থায়ী রিন বেড়িঁবাধঁ নির্মাণ করা হয়েছে তবে ভাঙন স্থানে স্থায়ী কোনো কাজ করা হয়নি। তাই হয়তোবা দ্রুত এই বেড়িঁবাধঁটি ভেঙে গেছে। আমাদের দাবি দ্রুত স্থায়ী বেড়িঁবাধঁ নির্মাণ করা হোক।
ফকু মিয়া বলেন, আমার ৬য়টি বাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমান বাড়িটি একেবারেই বাঁধের কোল ঘেষে। ‘পরিবারের নারীদের নিয়ে কোথায়ও যাবার জায়গা নেই। পানি এলে সব কিছু তছনছ হয়ে যাবে। এই বয়সে আর টানাটানি ভালো লাগে না।
সাফিয়া বেগম বলেন, গতকাল থেকে আমার ঘরে রান্না হয় নাই। এই নদী ভাঙণের জন্য। না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাটতেছি। চিন্তায় ঘুম আসে না। কোন সময়ে জানি নদীতে সব কিছু ভেসে যায়। বাচ্চাদের নিয়ে খুবই বিপদে আছি।
এমাদুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রায় ৩ বিঘা জমি ছিল। ছিল বড় বাড়ি। ৬ বারের ভাঙনে সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙনে সব বিলীন হওয়ায় এখন ১ শতাংশ ফসলের জমিও নেই। কোনোমতে একটা ঘর বানিয়ে বসবাস করছি, তাও ভয় পাচ্ছি এই ভাঙনে আবারও ঘরটি হারাই কিনা।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন, ঐ স্থানে আমাদের লোক পাঠানো হবে। দ্রুত বাঁধ সংস্কার করে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন স্থায়ী ভাবে পাকা ব্লক দেওয়ার জন্য প্রজেক্ট দেওয়া আছে কি না দেখে জানাতে পারবো। যদি থাকে তাহলে বাজেট পাওয়া গেলেই কাজ শুরু করা হবে।