সাধারন মানুষের কাছে বরগুনা পাসপোর্ট অফিস এখন আতংকের নাম। নতুন পাসপোর্ট আবেদন কিংবা রেনিউ সব ক্ষেত্রেই টাকা ছাড়া ফাইল ছাড়েন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব ঘুষের টাকার হিসেব হয় প্রত্যেক ফাইল অনুযায়ী। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এক শ্রেনীর দালাল সিন্ডিকেট।
অর্থৎ দালাল ছাড়া কোন কাজই সম্ভব না অফিসে। এদের কেউ কেউ আবার দুর্নীতি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই দালালের মাধ্যমে ঘুষসহ ফাইল জমা নেওয়া হয়। দালাল ছাড়া সরাসরি কেউ ফাইল নিয়ে গেলে তাকেও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তী, পদে পদে হতে হয় হয়রানী। সাধারণ ভুক্তভোগীদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে আবার আরনসার সদস্য।
সাধারণত বেলা ১টার পরে জমা নেওয়া হয়না বলে সাধারণ মানুষকে তারিয়ে দেন তারা, কিন্তু দেখা যায় ঘুষ দিয়ে ফাইল নিয়ে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসের দ্বিতীয় তলার ২০৪নং কক্ষে গেলেই রাখা হয় ফাইল জমা। শুধু তাইনা তাৎক্ষণিক ছবি, ফিঙ্গার, স্বাক্ষর নিয়ে আবেদনও সম্পান্ন করা হয়। এ কার্যক্রম বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলমান রাখেন কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, খুব সুক্ষ প্রতিটি আবেদনে ভিন্ন ভিন্ন চিহ্ন দিয়ে প্রেরণ করলেই কোন ঝামেলা ছাড়াই আবেদন জমা হয়। আর চিহ্ন পেতে দিতে হয় ঘুষে টাকা। ঘুষের টাকা না দিলে চিহ্ন পাওয়া যায় না। আর চিহ্ন ছাড়া ফাইল জমা হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।
চিহ্ন সম্পর্কে অবগত আছেন অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন- তাদের সকল কাগজপত্র সঠিক থাকার পরেও পরতে হয়েছে বিভিন্ন ভোগান্তিতে। আবেদন ফর্মে কেন টাকা জমা দেওয়ার তথ্য পূরণ করা হয়নি? প্রশ্ন করে বের করে দেয় অফিস কর্তৃপক্ষ।
অথচ দেখা গেছে অনলাইনে আবেদনফর্ম পূরণ করতে হলে টাকা জমার অপশনটি অফলাইন রাখা হয়েছে। সেহেতু টাকা জমা দেওয়ার তথ্য আবেদন ফর্মে উল্লেখ করার কোন সুযোগ নেই। বেশিরভাগ সময়ই উক্ত অফিসের আর আই মোঃ ইকবাল হোসেনের নাম শুনতে পাওয়া যায় আবেদনকারী ও দালাদের মুখে। এছাড়া পুরোনো এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) নবায়নের আবেদন নেয় না বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস।
স্থানীয় সূত্র বলছে, বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন ৩০-৫০টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে বেশির ভাগ আবেদন জমা হয় ‘ঘুষ চ্যানেলে’। আবেদনপ্রতি ন্যূনতম ঘুষ নেওয়া হয় ১৫শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। এ হিসাবে দৈনিক ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
সূত্র আরো বলছে, প্রবাসীদের এই ভোগান্তী আরো বেশি পোহাতে হয়। নানা জটিলতা দেখিয়ে তাদের দিনের পর দিন হয়রানী করা হয়। এমনকি বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের ভিসা নবায়ন, নো-ভিসা ইত্যাদি কাজে বিভিন্ন রেটে ঘুষ আদায় করা হয়। বিষয়টি এখন অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
শহরের কম্পিউটার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাসপোর্টের আবেদন ফর্ম বর্তমানে অনলাইনে পূরণ করতে হয়। ফর্ম পূরণ করার পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা জমা নেয়। টাকা জমা দিয়ে ঘুষ না দিয়ে কেউ অফিসে গেলে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
বাবা মায়ের আইডি কার্ডের সাথে আবেদনকারীর আইডি কার্ডে ‘া’ ‘’ি অথবা ‘ধ’ তে ‘ব’ অথবা ‘র’ মিল না থাকলেই হয়রানীর শুরু হয়। সবকিছু মিল থাকলেও সর্বশেষ ফর্মে টাকা জমা দেওয়ার তথ্য পূরণ করতে হবে বলে ফেরত পাঠায়। কিন্তু অনলাইনে আবেদন করতে টাকা জমার তথ্য পূরণের কোন অপশন নেই।
ফর্ম ডাউনলোড করলে পিডিএফ ফাইলের তৃতীয় পৃষ্ঠায় টাকা জমা দেওয়ার তথ্য চাহিদা ছক থাকে। পাসপোর্টে বেশ কয়েকটি তথ্য সংশোধনের ওপর কড়াকড়ির কারণে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে নাম, পিতা-মাতার নাম এবং জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব বিষয়ে ঘুষের রেট চড়া। তবে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এ ধরনের পাসপোর্ট করে নিতে অনেকে দালালদের কাছে ধরনা দেন। নাম অথবা জন্মতারিখ সংশোধনে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেন।
এ বিষয়ে বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ আইয়ুব আলীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরো খবর
পুলিশের সব ছুটি বাতিল, গুজব ঠেকাতে সতর্ক থাকার নির্দেশ