গর্ভাবস্থা সাধারণত ৯ মাসের কিছু বেশি দিন থাকে। এই ৯ মাসকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ৩ মাস ফার্স্ট ট্রাইমিস্টার, ৪-৬ মাস সেকেন্ড ট্রাইমিস্টার এবং ৬ মাসের পর থেকে শিশুর জন্ম পর্যন্ত সময়কে থার্ড ট্রাইমিস্টার বলে। এই ট্রাইমিস্টার অনুসারে গর্ভবতী নারীর খাবার নির্ধারণ করতে হবে। গর্ভধারণের পর অনেক খেয়ে স্বাস্থ্য বাড়িয়ে ফেলার কোনো মানে নেই। এই প্রক্রিয়া বরং পরবর্তী সময়ে নানা রোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতী মা পুষ্টিবিশেষজ্ঞের পরামর্শে ১১-১৩ কেজি ওজন বাড়াতে পারবেন পুরো গর্ভকালে। শরীরের গঠন অনুসারে তা কমবেশি হবে।
১-৩ মাসের খাবার
প্রথম ট্রাইমিস্টারে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না, যদি আপনার ওজন সঠিক থাকে। এ সময় আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা আপনার শরীরের চাহিদা অনুসারে হলেই যথেষ্ট। তার জন্য তাজা ফলমূল, শাকসবজি, সর ছাড়া দুধ বা দই, মাছ বা মাংস, প্রতিদিন ১টা ডিম ও বাদাম খাবেন। পানি খাবেন ১২-১৫ গ্লাস। ক্যাফেইনসমৃদ্ধ খাদ্য কম খেয়ে বাড়িতে বানানো ফলের জুস, দই, লাচ্ছি খান প্রচুর পরিমাণে। বাইরের খাবার যত পারবেন কম খাবেন। এ সময় ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। করলা, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, মেথি, পুদিনা, ধনে, বাদাম ও কিশমিশে ফোলেট পাওয়া যায় প্রাকৃতিকভাবে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে।
৪-৬ মাসের খাবার
অতিরিক্ত ২০০-৩০০ ক্যালরি খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন এ সময়ে। খাবারে ভিটামিন ডি ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকতে হবে প্রচুর পরিমাণে। শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের সঠিক গঠনের জন্য এই উপাদানগুলো প্রয়োজন। সূর্যের আলো, ডিমের কুসুম, ইলিশ মাছের ডিম, দুধ, দই, বাদামি চাল ও গমে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় প্রাকৃতিকভাবে। এ ছাড়া ওমেগা ৩-এর জন্য সামুদ্রিক মাছ ও তিসির তেল খেতে হবে। এ সময় আয়োডিন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
৬-৯ মাসের খাবার
শেষ ট্রাইমিস্টার মূলত ৬ মাস থেকে শিশু জন্ম হওয়ার সময় পর্যন্ত। এ সময় আগের তালিকা ধরেই খাবার খেতে হবে। তবে পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে হবে। এ জন্য চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাবার নির্দিষ্ট করতে হবে। থার্ড ট্রাইমিস্টারে শিশুর ওজন বাড়ে। এ সময়ে মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য ও বুক জ্বালা হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। তবে আঁশযুক্ত ফল ও শাকসবজি এবং সঠিক খাদ্যতালিকা এসব থেকে মুক্ত রাখতে পারে গর্ভবতী মাকে।
আরও যা করবেন
- ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে
- দুশ্চিন্তা এড়িয়ে হাসিখুশি থাকতে হবে
- ইতিবাচক মানসিকতা সুস্থ, সুন্দর, বুদ্ধিমান শিশুর জন্ম দিতে পারে।
লেখক: ক্লিনিক্যাল ডায়াটিশিয়ান ও নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল, রামপুরা