নানা অজুহাতে আবারও চিনির দামে আগুন লেগেছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চিনির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। তবুও বাজার ঘুরে দেখা গেছে চিনির সংকট।
বাজারে বাড়তি দাম, ক্রেতারাও বাধ্য হয়ে এই দামেই কিনছে, তবুও কেন সংকট— এমন প্রশ্নের উত্তর নেই ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, বাড়তি দামেও সংকটের কারণ হলো আবারও দাম বাড়ানোর একটা প্রয়াস মাত্র।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসময় এই এলাকার অনেক দোকানে খোঁজ নিয়ে খোলা চিনি পাওয়া যায়নি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ক্রেতারা বেশি দামে খোলা চিনি কিনতে চাইছেন না।
কী বলছেন ব্যবসায়ীরা
মধ্যবাড্ডা এলাকার রাজিয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ১২০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করছি। বেশি দাম কিনে আনলে আমাদেরও একটু বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। কি করব, মার্কেটেও পর্যাপ্ত নেই। বিক্রি করতে হলে বেশি দামেই কিনে আনতে হবে। অন্যথায় বিক্রি করা বন্ধ করে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোম্পানিকে আজও ফোন দিয়েছি, তারা বলতে পারছে না কবে চিনির দাম কমে আসবে। আমাদের কেনা দাম ১১০ টাকারও বেশি।’
ওই এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘এক মাস আগেও আমরা ৯০ টাকা করে চিনি বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করছি ১১৫ টাকায়। কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বেড়েছে।’ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তার জবাব, ‘আমরা কিছু বলতে পারি না।’
বাড়তি দামেও কেন বাজারে চিনির সংকট এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হয়তো চিনির উৎপাদন কমে গেছে। আরেকটা কারণ হতে পারে, বেশি লাভের আশায় বড় বড় কোম্পানিগুলো হয়ত বাজারে চিনি ছাড়ছে না। তারা হয়ত মজুত করছে। এছাড়া তো হঠাৎ সংকট হওয়ার আর কোনো কারণ দেখছি না।’
ইব্রাহিম আরও বলেন, ‘আমরা ছোট ব্যবসায়ী, চিনি শেষ হলে এক-দুই বস্তা করে গিয়ে নিয়ে আসি বা ফোন দিলে পাঠিয়ে দেয়। আমাদের মজুত করারও কোনো সুযোগ নেই।’
বিল্লাল মিয়া নামে আরেক দোকানি বলেন, ‘আমি যখন কিনে এনেছিলাম তখন আমার পরিবহন, লেবার খরচসহ ১০৫ টাকা করে খরচ ছিল, যে কারণে এখন আমি ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আমার কাছে এখনও যে চিনি আছে, আরও দুই দিন বিক্রি করতে পারব। কিন্তু এরপর কি হয় বলতে পারছি না।’
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মার্কেটে দাম বেশি হলে তো এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আড়তদারকে জিজ্ঞেস করলে বলছে আমরা যেখান থেকে মাল আনি, সেখানেও বেশি। এভাবে অনেকগুলো হাত ঘুরে দামটা বেড়ে যাচ্ছে।’
এদিকে চিনির দাম নিয়ে ক্ষোভ ক্রেতাদের মধ্যে। দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাজারে আসা নজরুল ইসলাম নামে এক বেসরকারি স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘দেশে যখন যার মন চায়, সেই দাম বাড়িয়ে দেই। বাজারে এতটা অব্যবস্থাপনা আর কোনো দেশে আছে কি না আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘এক মাস আগেও যেখানে চিনির দাম ছিল ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকা, সেখানে হুটহাট করে কীভাবে ২০-৩০ টাকা বেড়ে যায়? এর পেছনে কারা জড়িত খুঁজে বের করার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু এরকম কিছু আমরা দেখছি না।’
শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যাংকার বলেন, ‘দুই দোকানে ঘুরেছি, চিনি পাইনি। শেষে একটাতে পেয়েছি, কিন্তু দাম ১২০ টাকা। মানে হলো তারা এই দামেও সন্তুষ্ট না, আরও দাম বাড়ানোর ধান্দায় আছে।’
২০২১ সালের শুরুতে এক কেজি চিনির দাম ছিল ৬৫ টাকা। পরে ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৭০ টাকা। এরপর গেল ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন-বিএসএফআইসি আরও ৫ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করে ৭৫ টাকা।