ঋণখেলাপির দায়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত
logo
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণখেলাপির দায়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত

মোঃ মাহমুদুল হাসান (বরগুনা) প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১ ৪:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বরগুনার আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খেলাপীর দায়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও উপজেলা নির্বাচনের ট্রাইব্যুনালের বিচারক আল মামুন এই রায় দেন। একই সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শামসুদ্দিন আহম্মদ ছজুকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে নির্বাচন কমিশনকে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে অংশগ্রহণ করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম সরোয়ার ।পরে ঋণখেলাপির দায়ে ফোরকানকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণার জন্য ওই বছরের ২১ এপ্রিল আদালতে মামলা দায়ের করেন ছজু।

এ মামলায় বরগুনার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও উপজেলা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুনের এক আদেশে বুধবার ছজুকে আমতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণার করেন। মামলার রায়ে আগামি ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ফোরকানকে আমতলী উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনকে গেজেট নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের শাখা থেকে নিজ নামে এক বছর মেয়াদে ১৮ লাখ টাকা ঋণ তোলেন ফোরকান। যা সুদে-আসলে ২৪ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এছাড়াও নিজের মালিকানাধীন বনানী ট্রেডার্সর নামেও এক বছরের মেয়াদে ঋণ তোলেন গোলাম সরোয়ার ফোরকান। যা সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখে। যথাসময়ে এই ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকা নাম ওঠে গোলাম সরোয়ার ফোরকানের।

২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মনোনয়নপত্রে গোলাম সরোয়ার ফোরকান তার ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরপর নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি।

ওই বছরের ২১ এপ্রিল ফোরকানের ঋণখেলাপির তথ্য সংযোজন করে বরগুনার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও উপজেলা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শামসুদ্দীন আহমেদ ছজু। আদালত সকল তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ফোরকানকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে আমতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করে আদেশ দেন।

এ বিষয়ে শামসুদ্দিন আহমেদ ছজুর আইনজীবী অ্যডভোকেট জগদীশ চন্দ্র শীল বলেন, গোলাম সরোয়ার ফোরকান ২০১৩ সালে তার নিজ নামে এবং তার মালিকানাধীন বনানী ট্রেডার্সের নামে এক বছর মেয়াদে পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ঋণ তোলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে তিনি ঋণ পরিশোধ না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তার ঋণের অনুকূলের শতভাগ সুদ মওকুফের জন্য রুপালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর এক বছরের মধ্যে প্রদানের জন্য ৮০ ভাগ সুদ মওকুফ করেন। এ টাকাও তিনি যথাসময়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন।

আইনজীবী আরো বলেন, গোলাম সরোয়ার তার ঋণ খেলাপির এসব তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন। পরে আমার মক্কেল নিজেকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি করে ফোরকানেরকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন।পরে আদালত আজ এ রায় দেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেন এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি । আদালতের আদেশ কপি পেলে আমরা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনারকে জানাবো।

চেয়ারম্যানের থেকে অবধি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে গোলাম সরোয়ার ফোরকানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।