স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ
logo
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ

স্বাস্থ ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে

ক্যান্সার একটি বহুল পরিচিত রোগ। সঠিক সময়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসা না করা গেলে ক্যান্সারের প্রকোপে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার হতে পারে। স্তন ক্যান্সার তাদের মধ্যে অন্যতম। এই ক্যান্সার অনেক সময়ই আমাদের শরীরে আমাদের অজ্ঞাতে বৃদ্ধি পায়। তার প্রধান কারন এই রোগ সম্বন্ধে আমাদের অসচেতনতা। যদি এই রোগের প্রাথমিক পর্যায় একে সনাক্ত করা যায় তাহলে আমরা অনেক মানুষকে এই রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারব। আসুন আমরা স্তন ক্যান্সার নিয়ে বিশদে আলোচনা করে এর সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াবার চেষ্টা করি।

প্রায় সমস্ত প্রকারের ক্যান্সারের সাধারণ বিশিষ্ট হোল আমাদের শরীরে কোষের অস্বাভাবিক, অনিয়মিত বৃদ্ধি এবং কোষ বিভাজন। ক্যান্সার-আক্রান্ত কোষ শরীরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পরে। এতে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। যদিও স্তন ক্যান্সার প্রায় সম্পূর্ণরূপে মহিলাদের মধ্যেই ঘটে থাকে তবে পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হওয়া একান্ত অসম্ভব নয়। সংখ্যায় কম হলেও পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের ঘটনা সাধারণত বেশি বয়সে দেখা যায়। তুলনামূলক বিচারে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার সম্ভাবনা কম বয়সেই বৃদ্ধি পায়।

কিভাবে স্তন ক্যান্সার হয়?

স্তন গঠিত হয় fatty, fibrous, এবং glandular কোষ সমষ্টি (কলা) দিয়ে। মানুষের স্তনের মধ্যে থাকা কোষগুলি যদি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বাড়তে শুরু করে, তখন এই ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়। স্তনে থাকা বিভিন্ন কোষগুলির মধ্যে যে কোন কোষেই এই রোগ হতে পারে। তবে প্রধানত মাতৃ দুগ্ধ উৎপাদনে যুক্ত কোষেই (milk ducts এর আস্তরণ-কারী কোষ এবং lobules) এই প্রকার ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। সেই কারনে মহিলারাই এই রোগে সর্বাধিক আক্রান্ত হন। স্তনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন কোষগুলির অতিরিক্ত বেড়ে ওঠার কারনে শরীরে স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন হয়। স্তনের অভ্যন্তরে মাংসল পিণ্ডের (lump) আকার অনুভূত হয়। যদিও যেকোনো পিণ্ডের মতন আকার স্তনের মধ্যে অনুভব করা মানেই ক্যান্সার হয়েছে এটা বলা যায় না। এটি একটি সাধারণ tumor ও হতে পারে। শুধু মাত্র ম্যালিগন্যান্ট tumor ই মারাত্মক ক্যান্সারের আকার নেয়। ম্যালিগন্যান্ট স্তন ক্যান্সার রক্ত এবং লসিকা (lymph) বাহিকার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পরতে পারে। এই অবস্থা কে বলা হয় metastasized।

স্তন ক্যান্সারের প্রকারভেদ

Infiltrating (invasive) ductal carcinoma – এই অত্যন্ত সাধারণ স্তন ক্যান্সার। এর সূচনা হয় স্তনের দুগ্ধ-নালি তে। নালির গাত্র ভেদ করে এই প্রকার ক্যান্সার ধীরে ধীরে স্তনের অন্য অংশে ছড়িয়ে পরে।

Ductal carcinoma in situ – একে পর্যায়-০ বা প্রি-কান্সারউস পর্যায়ের স্তন ক্যান্সার বলা হয়। এই অবস্থায় চিকিৎসা করলে রোগ সফল ভাবে নির্মূল করা সম্ভব। অবশ্য সঠিক চিকিৎসার জন্য সময়মতো রোগ নির্ণয় ভীষণ জরুরী।

Infiltrating (invasive) lobular carcinoma – অন্তত 10% থেকে 15% স্তন ক্যান্সার এই প্রকারের হয়। এর উৎপত্তি স্তনের দুগ্ধ উৎপাদক কোষ (lobules) গুলি তে হয়ে থাকে।

Lobular carcinoma in situ – এটিও প্রি-কান্সারউস পর্যায়ভুক্ত। এই অবস্থা থেকে ম্যালিগন্যান্ট স্তন ক্যান্সারে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লবুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের নিয়মিত ম্যামোগ্রাম বা অনুরূপ টেস্ট করাতে অনুরোধ করা হয়।

Triple negative breast cancer – সাধারণ ভাবে 15% স্তন ক্যান্সার এই প্রকারের হয়। এই প্রকারের নির্ণয় এবং সফল চিকিৎসা অত্যন্ত দুরহ।

এই 5 প্রকার ছাড়াও আরো দুই ধরনের স্তন ক্যান্সার দেখা যায় – Inflammatory breast cancer এবং Paget’s disease of the breast। এরা প্রধানত স্তনের ত্বকে প্রভাব বিস্তার করে।

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ

ল্যাবে পরীক্ষা না করে স্তন ক্যান্সার সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায় না। অবশ্য বিশেষ কিছু লক্ষণের ব্যাপারে সজাগ থাকলে আমরা ঘরোয়া ভাবে স্তন ক্যান্সারের সম্বন্ধে সচেতন থাকতে পারি। এই সম্ভব্য লক্ষণ গুলি হল-

স্তনের কোন কোন অংশ ফুলে যাওয়া।

স্তনের আকার পরিবর্তন।

অভ্যন্তরে কোন পিণ্ডের অস্তিত্ব অনুভূত হওয়া।

স্তন বা স্তন বৃন্ততে ব্যথা।

স্তনের বোঁটা বা ত্বক লালচে এবং শুষ্ক হয়ে যাওয়া।

স্তন থেকে সাদা তরল (স্রাব) বা রক্ত মিশ্রিত তরল বেরিয়ে আসা।

বাহুর নিচে বা কণ্ঠার হাড়ের কাছে ফোলা অনুভূত হওয়া।

স্তন ক্যান্সার কত দিনে ছড়ায়

স্তন ক্যান্সারকে রোগের ক্ষতিকারক ক্ষমতার অপর বিচার করে 5 টি পর্যায়ে ভাগ করা যায় –

Stage 0

Stage I

Stage II

Stage III

Stage IV

প্রতি 180 দিনে বা প্রায় প্রতি 6 মাসের মধ্যে স্তন ক্যান্সার এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে বাড়তে পারে। তাই স্তনের আকার এবং গঠনের পরিবর্তন খুব ভাল করে পরীক্ষা করা উচিত। এতে প্রাথমিক পর্যায়ই সতর্ক হওয়া যায় এবং সঠিক চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।

Stage 0 – এই পর্যায় ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলি আক্রমণাত্মক হয় না। ফলে স্তনের মধ্যে এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পরতে পারে না।

Stage I – এই সময় ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্যবান কোষগুলি কে আক্রমণ করা শুরু করে।

Stage II – সাধারণত পিণ্ডের আকার এই সময় 2 সেন্টিমিটার এর থেকে ছোট থাকে এবং বৃদ্ধি পেয়ে তা 5 সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

Stage III – এই পর্যায় ক্যান্সার আরো দ্রুত ছড়িয়ে পরতে থাকে। লসিকা-বাহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরে এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। একে locally advanced breast cancer ও বলা হয়।

Stage IV – এটি অন্তিম পর্যায় এবং রোগীর পক্ষ্যে সফল চিকিৎসার সুযোগ থাকে না। এই সময় ক্যান্সার হাড়, ফুসফুস, লিভার এবং মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পরতে পারে। ফলস্বরূপ রোগীর মৃত্যু সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।

সকলের শরীরে ক্যান্সারের বৃদ্ধির হার একি রকম নাও হতে পারে। মানুষের শরীরের ইমিউনিটি ক্ষমতা, খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারার উপরে নির্ভর করে ক্যান্সার বৃদ্ধি কম বা বেশি হয়।

স্তন ক্যান্সারের কারন

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত স্তন ক্যান্সারের সঠিক কারন জানা যায়নি। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই ধরনের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি দেখা অনুধাবন করা গেছে, যেমন –

বয়স এবং লিঙ্গ – ৫০ ঊর্ধ্ব মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি।

জেনেটিক্স বা বংশ-গত কারন।

নিয়মিত এবং অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান

শরীরে মেদ-বাহুল্য-তা

তেজস্ক্রিয় বিকিরণ

হরমোন থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

স্তন ক্যান্সার নির্ণয়

স্তন ক্যান্সার নির্নয় করার জন্য আজকাল চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুব উন্নত পদ্ধতির আবিস্কার হয়েছে।

ম্যামোগ্রাম – এই পদ্বতিতে এক্স-রের সাহায্যে স্তনের আকার এবং গঠনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন সহজে লক্ষ্য করা যায়। এটি কোনরকম ক্ষত সৃষ্টি করে না। এবং প্রাথমিক পর্যায়েই কান্সারের উপস্থিতি ধরা পরে।

আলট্রাসনোগ্রাম – এই পরীক্ষা পদ্বতিতে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে স্তনের অভ্যন্তরের কোষ সমষ্টির ছবি তলা যায়। এতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন চোখে পরে।

পি-ই-টি স্ক্যান – এই ধরনের টেস্টে বিশেষ রঞ্জকের (dye) ব্যবহার করে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষ গুলির রঞ্জিত করা যায়। স্ক্যানের সময় এই বিশেষ ভাবে রঞ্জিত কোষগুলি সহজেই ধরা পরে। এই পরীক্ষায় ক্যান্সারের বৃদ্ধির হার বিশেষ ভাবে বোঝা যায়।

এম-আর-ই – এই টেস্টে চুম্বকীয় এবং রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে কান্সার-আক্রান্ত কোষ গুলিকে নির্দিষ্ট করা যায়।

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।