মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য ও পরিণাম
logo
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য ও পরিণাম

বনি আমিন
আগস্ট ১৪, ২০২২ ৯:২২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মানুষের সবচেয়ে নিকৃষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফেকি তথা দ্বিচারিতা। মুনাফিক শব্দটি ‘নফক’ শব্দ থেকে উৎকলিত। যার অর্থ গর্ত, ছিদ্র, সুড়ঙ্গ, বের হওয়া, খরচ করা, ব্যয় করা ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায় মুখে ইমানের কথা বলে অন্তরে কুফর লালন করাই মুনাফেকি। পবিত্র কোরআনে মুনাফিকুন নামে স্বতন্ত্র সুরা নাজিল হয়েছে। এ ছাড়া কোরআনের বিভিন্ন বর্ণনায় মুনাফিকদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও পরিণামের কথা আলোচিত হয়েছে।

মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য

  • আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ৮ থেকে ২০ পর্যন্ত মোট ১৩টি আয়াত মুনাফিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে নাজিল করেছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সুরায় আরও ৩৮টি আয়াতে মুনাফিকদের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। মুনাফিকের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো—
  • তারা দুমুখো স্বভাবের হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তারা মুমিনদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে—আমরা ইমান এনেছি, আবার যখন নিরিবিলি তাদের শয়তানদের (কাফির নেতাদের সঙ্গে) মিলিত হয়, তখন বলে—আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি।’ (সুরা বাকারা: ১৪)
  •  তারা খুবই ধূর্ত ও প্রতারক হয়। তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সঙ্গে প্রতারণা করে। তারা এই কাজকে সফলতা ও বিজয় মনে করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ ও ইমানদারদের তারা ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা অন্য কাউকে ধোঁকা দিচ্ছে না, বরং নিজেদেরই প্রতারিত করছে, অথচ তাদের সেই অনুভূতি নেই।’ (সুরা বাকারা: ৯)
  • তাদের বিশ্বাসে সন্দেহ, অস্বীকৃতি ও মিথ্যা থাকার কারণে তাদের অন্তরকে অসুস্থ অন্তর বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি। এরপর আল্লাহ সেই ব্যাধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের মিথ্যাচারের কারণে। তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা বাকারা: ১০)
  • তারা ইসলাম ও সামাজিক স্থিতিশীলতার বিরোধিতা করে এবং অশান্তি সৃষ্টি করে। কিন্তু তারা নিজেদের ভ্রষ্টতা ও অজ্ঞতার কারণে তা অনুভব করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সাবধান! এরাই ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তাদের সেই অনুভূতি নেই।’ (সুরা বাকারা: ১২)
  • তারা নিজেদের বুদ্ধিমান ও চালাক মনে করে। আর মুমিন ও নেককারদের নির্বোধ ও বোকা বলে মনে করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের বলা হয়—অন্য লোকজনের মতো তোমরাও ইমান আনো, তখন তারা বলে—আমরা কি সেই নির্বোধদের মতো ইমান আনব? আসলে তারাই নির্বোধ, কিন্তু তাদের সেই জ্ঞান নেই।’ (সুরা বাকারা: ১৩)
  • তারা মিথ্যুক। তারা আল্লাহ ও রাসুল সম্পর্কে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’ (সুরা মুনাফিকুন: ১)
  • তারা অহংকারী ও দাম্ভিক। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি তাদের দেখবেন যে তারা অহংকার করে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা মুনাফিকুন: ৬)

মুনাফিকের পরিণাম

মুনাফিকদের পরিণাম ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান করবে।’ (সুরা নিসা: ১৪৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ওয়াদা করেছেন—মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীদের এবং কাফিরদের জন্য রয়েছে দোজখের আগুন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে। সেটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিয়েছেন এবং তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আজাব।’ (সুরা মুনাফিকুন: ৬৮)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মুনাফিক মহানবী (সা.)-এর যুগে যেমন ছিল, আজকের দিনেও আছে, আর সেটা হলো ইমান প্রকাশ করে আল্লাহর দীনের বিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়া। (বুখারি)

বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ ,ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

দৈনিক বিবর্তন এর প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।